National & International Day

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে অনুচ্ছেদ ও ভাষণ ২০২৫

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে অনুচ্ছেদ ও ভাষণ : একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাঙালি জাতির জন্য একটি গর্বের দিন। এই দিনে বাঙালি জাতি তাদের মুখের ভাষা পাকিস্তানি বাহিনীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে ছিল। তাদের অধিকার আদায় করে নিয়েছিল। পাকিস্তানি পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলা ভাষাভাষীরা তা মেনে নিতে পারেননি।তারা পশ্চিম পাকিস্তানের ঐ ঘোষনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলেন। এক পর্যায়ে গিয়ে সেই প্রতিবাদ সংঘাতে পরিণত হয়ে যায়।লক্ষ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে এক সময়ে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা দিতে তৎকালীন সরকার প্রধান বাধ্য হন।

আমরা আজকে আমাদের প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে একটি অনুচ্ছেদ ও একটি ভাষণ উপস্থাপন করব। আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গুলো সম্পাদন করতে গিয়ে অনেক সময় এই দুটো জিনিসের প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে যে সকল ছাত্র-ছাত্রীরা রয়েছেন তাদের বিভিন্ন পরীক্ষায় কিংবা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানে লেখার প্রয়োজন পরে পাশাপাশি একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উপস্থিত ভাষান প্রদান করার প্রয়োজন হয় অনেক সময়। আপনাদের সুবিধার্থে আজকে আমরা আমাদের প্রতিবেদনটি সাজিয়েছি। আপনারা যারা অনলাইনে এসে এ বিষয়ে বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে এই বিষয়ের তথ্য সংগ্রহ করতে চান এবং আমাদের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেছেন আপনারা ঠিক জায়গায় প্রবেশ করছেন। আপনারা ধৈর্য সহকারে আমাদের প্রতিবেদনটি পাঠ করুন। এখান থেকে এ বিষয়ে তথ্য পেয়ে যাবেন।। আমরা আশা করছি যে আমরা আশা করছি যে এই প্রতিবেদনটি আপনাদের অনেক ভালো লাগবে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নিয়ে কিছু কথা

 আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিশ্বের বেশ কিছু দেশে  আজ মহান একুশে ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে দিবসটাকে পালন করছে।এই দিনটাকে কেন্দ্র করে সারা দেশের আপামর বাঙালি জনতা শহীদ মিনারের  পুষ্প স্তবক সহ অর্পণ সহ বেশ কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। পাশাপাশি শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করা হয় সেই সকল বাঙালি যাদের বুকে তাজা রাখতে আমরা আজকে আমাদের মুখের ভাষাকে পেয়েছি। শহীদ মিনারে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করবেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রধান উপদেষ্টা। উনারা মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণী প্রদানের মধ্য দিয়ে সারাদেশের মানুষকে মাতৃভাষা দিবসের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দেশনা প্রদান  করে থাকেন। শহীদদের স্মৃতি স্মরণ করে বিভিন্ন দেশাত্মবোধক গানের প্রচার প্রচারণা করা হয় এই দিনে। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে, বিভিন্ন মিডিয়ায় একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনাকে ধারণ করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান পরিচালনা করা হয়।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে অনুচ্ছেদ

একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্বের কয়েকটি দেশ ও বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের জন্য একটি বিশেষ দিন। ১৯৫২ সালের এই দিনে ঢাকার রাজপথে ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার সহ নাম না জানা আরো অনেকে। একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সুপরিচিত রয়েছে। আমরাই একমাত্র জাতি যারা নিজের ভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়েছি। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এবং ২০০০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী এই দিনটি যথাযথ মর্যাদা সহিত পালিত হয়ে আসছে। তখন থেকেই ২১ শে ফেব্রুয়ারি শুধুমাত্র বাঙ্গালীদের জন্য নয় এটি বিশ্বের ভাষা প্রেমিকদের জন্য একটি ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণে সংগ্রামের প্রতীক। ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে মাতৃভাষা দিবস ব্যাপক উৎসাহের মধ্য দিয়ে পালিত হয়।

বিশ্বজুড়ে এখন বাংলা ভাষার প্রভাব ক্রমশ বেড়েই চলেছে। ইতিমধ্যেই সিয়েরা লিওন বাংলা ভাষাকে তাদের মাতৃভাষা হিসেবে ঘোষণা করেছেন। বিশ্বের ৩০ টি দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে মোট ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষার উপরে গবেষণা ও শিক্ষা কার্যক্রম চালু রেখেছে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর থেকেই অর্থাৎ ২০০০ সাল থেকেই বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ভাষণ

আমরা আমাদের প্রতিবেদনের এই অংশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে একটি ভাষণ আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি। আপনারা এই ভাষণটি আপনার প্রয়ৈজন অনুযায়ী বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রদান করতে পারবেন। এই ভাষণটিকে আরো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার জন্য এর সাথে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী কিছু তথ্য যোগ করে নিতে পারেন।

সাদর সম্ভাষণ—

সম্মানিত উপস্থিতি, আমাদের আজকের এই আলোচনা সভার মাননীয় সভাপতি, সম্মানিত অতিথিবৃন্দ সকলকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। যথাযথ সম্মানের সহিত আপনাদের সালাম জানাচ্ছি আসসালামু আলাইকুম এবং হিন্দু ভাইদের জানাচ্ছি আদাব।

ভাষণের ভূমিকা

আজ মহান একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির ইতিহাসের একটি গৌরবজ্জল দিন। আজকের এই দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সেই সকল বীর শহীদদের, যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা আমাদের মাতৃভাষা বাংলা ভাষার মর্যাদা পেয়েছি। আমরাই বিশ্বের মধ্যে সর্বপ্রথম কোন জাতি যারা ভাষার জন্য অকাতরে জীবন বিসর্জন দিয়েছি। সে কারণেই আমরা বাঙালি জাতি বিশ্বের কাছে সকল ভাষা প্রেমীদের কাছে আমরা সম্মানিত।

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস

 একটি জাতির সংস্কৃতি ,ঐতিহ্য ও আত্মপরিচয়ের মূল উৎস হচ্ছে ভাষা। এই ভাষার মাধ্যমে আমরা আমাদের মনের ভাবকে প্রকাশ করে থাকি। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা পাকিস্তানি বাহিনীর দেওয়া ১৪৪ ধারা অপেক্ষা করে ঢাকার রাজপথে নেমেছিল সেদিনের বাংলার সূর্য সন্তানেরা সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার এবং আরো অনেক ছাত্ররা। সেদিন বুকে তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল রাজপথে তারা মনে করেছিল মাতৃভাষা অধিকার করাই শুধু নয়, এটি আমাদের অস্তিত্বের লড়াই। আমাদেরকে  লড়াইয়ে জিততেই হবে। কোন ভিনদেশী পরাশক্তির কাছে আমরা মাথা নত করব না ।আমাদের অস্তিত্বকে বিলিয়ে দেব না।

ভাষা আন্দোলনের পটভূমি

১৯৪৭ সালের উপমহাদেশের দেশ বিভক্তি হয়। এ সময় দুটি ভাগে বিভক্ত হয়। একটি হয় ভারত আর একটি হয় পাকিস্তান। পাকিস্তান দুটি অংশে বিভক্ত হয়েছিল, একটি হলো পূর্ব পাকিস্তান আরেকটি হলো পশ্চিম পাকিস্তান। পূর্ব পাকিস্তান অবস্থান করছিল বাংলা ভাষাভাষীদের জনগণ আর অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তানে ছিল উর্দু ভাষার ভাষীরা। পাকিস্তানের সরকার ষড়যন্ত্র করে সমগ্র পাকিস্তানের ভাষাকে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার পায়তারা করেছিলেন। অথচ সেই সময়ে পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যা ছিল বাংলা ভাষাভাষী। এক সময়ে তৎকালীন পাকিস্তানের জেনারেল ইয়াহিয়া খান ঢাকায় এসে এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা প্রধানকালে বলেন, উর্দুই হবে বাংলার পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। এই ভাষণের পরবর্তীকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সহ দেশের আপামর জনগণ সোচ্চার হয়ে ওঠে। ইয়াহিয়া খানের এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদ গড়ে তোলে এবং এই প্রতিবাদ আস্তে আস্তে সংঘাতের দিকে রূপ নেয়। এক সময়ে ঢাকার রাজপথে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সেই ১৪৪ ধারাকে অমান্য করে ঢাকা রাজপথে নেমে পড়ে। তখন পাকিস্তানি পুলিশ বাহিনী তাদের ওপরে গুলিবর্ষণ করে নির্বিকারে। সেখানেই অনেক ছাত্ররা শহীদ হয়ে যান। এরপর থেকেই আন্দোলন আরো তীব্র থেকে তীব্রতর আকার ধারণ করে। তৎকালীন সময়ে বাংলাদেশের দুই প্রবাসী কানাডায় অবস্থান করছিলেন তারা দেশের প্রতি ভালোবাসার টানে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা মর্যাদা দেওয়ার জন্য কফি আনানকে বার্তা প্রদান করে।এক পর্যায়ে ১৯৫৬ সালে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি লাভ করে।১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ২০০০ সাল থেকে সারা বিশ্বে দিনটি অত্যন্ত গৌরবের সাথে উদযাপিত হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য

বিশ্বের প্রায় ৭০০০ ভাষা রয়েছে যার মধ্যে অনেক ভাষা বিলুপ্তের পথে রয়েছে। মাতৃভাষা দিবস শুধু বাঙালির নয়, এটি বিশ্বর সকল ভাষা প্রেমী মানুষদের জন্য একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনটি আমাদের মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা জাগিয়ে তোলে।আজকে আমরা গর্বিত আমরা আমাদের নিজের ভাষায় কথা বলতে পারতেছি। একটি শিশু জন্মগ্রহণের পরেই তার কথা বলার জন্য অবশ্যই একটি ভাষার প্রয়োজন রয়েছে। তার মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য। ভাষা আমাদের মৌলিক অধিকার। আজকে আমরা যে মাতৃভাষায় কথা বলতেছি তার পেছনে যে সকল ভাইদের অবদান রয়েছে, আজকের এই দিনে আমরা তাদেরকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।

মাতৃভাষা রক্ষার্থে আমাদের করণীয়

বর্তমান সময়ে আমাদের মাতৃভাষা বিকৃত হয়ে যাচ্ছে। আমাদের মাতৃভাষার সাথে অন্যান্য ভাষাগুলো ব্যাপকভাবে জড়িয়ে পড়ছে। আমরা সেটা কখনোই আশা করতে পারি না।মাতৃভাষা আমাদেরকে রক্ষা করতে হবে, এর দায়িত্ব আমাদের সকলের আমরা স্বাধীন জাতি আমরা কারো কাছে কখনো পরাজিত হয় না। মাতৃভাষায় রক্ষার্থে যেসব বিষয় আমাদের করণীয় রয়েছে—

মাতৃভাষা রক্ষার্থে যা করতে হবে

 শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাতৃভাষার চর্চার বৃদ্ধি করা।

আধুনিক প্রযুক্তিতে মাতৃভাষার চর্চার ব্যবস্থা করা।

ভিনদেশী ভাষা ব্যবহার থেকে নিজেকে বিরত রাখা।

নতুন প্রজন্মকে মাতৃভাষার প্রতি আকৃষ্ট করা।

সারা বিশ্বে বাংলা ভাষার ব্যাপ্তি ছড়িয়ে দেওয়া।

আসুন সকলে মিলে দেশকে ভালবাসি, দেশের মানুষকে ভালোবাসি, দেশের ভাষাকে ভালবাসি, দেশের সংস্কৃতিকে ভালোবাসি। একুশের চেতনাকে লালন করি। একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের যে শিক্ষা দিচ্ছে সেই শিক্ষাকে সাদরে গ্রহণ করি। ভাষা শহীদদের আজকের এই দিনে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করি। তাদের স্মৃতির স্মরণে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। ১৯৫২ সালের আজকের এই দিনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের গল্প আমাদের নতুন প্রজন্মকে জানানোর চেষ্টা করি। বাংলা ভাষাকে কখনোই বিলুপ্ত হতে দেওয়া যাবে না তা আমাদের সব সময় মাথায় রাখতে হবে। ধন্যবাদ সকলকেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *