আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বক্তৃতা ২০২৫

একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এই দিবসটি শহীদ দিবস হিসেবে ও পরিচিতি রয়েছে। এই দিনটিতে বাঙালি জনগণের ভাষা আন্দোলনের একটি গৌরবজ্জ্বল স্মৃতি- বিজড়িত দিন। ১৯৫২ সালের এই দিনে বাংলাদেশের মাতৃভাষা রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঢাকায় আন্দোলনরত নিরস্ত্র বাঙালি ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলি বর্ষন হয়। এতে অনেক ছাত্র শহীদ হয়ে যান। এই শহীদদের মধ্যে রয়েছে রফিক, জব্বার, শফিক, সালাম, বরকত সহ নাম না জানা আরও অনেকেই। এই দিনটিকে বাংলাদেশ সহ পশ্চিমবঙ্গে বিশেষভাবে স্মরণ করা হয়ে থাকে। এই দিনটি উদযাপন উপলক্ষে শহীদ মিনারে পুষ্প স্তবক অর্পণ করা হয়।
সম্মানিত পাঠক আমরা আজকে আমাদের প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বক্তৃতা কিভাবে প্রদান করা হয় সে বিষয়ে আলোচনা করব। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ইতিহাস আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি সহ বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আমরা আমাদের প্রতিবেদনটি সাজিয়েছি। আপনারা মনোযোগ সহকারে প্রতিবেদনটি পাঠ করলে এখান থেকে এ বিষয়ে যাবতীয় তথ্য পেয়ে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ইতিহাস
১৯৪৭ সালের নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরে সর্বপ্রথম ভাষা আন্দোলনের জন্য বিক্ষোভ শুরু হয়। ১৯৪৮ সালে সীমিত পর্যায়ে আন্দোলন হয়েছে। ১৯৫২ সালে এ আন্দোলন চরম আন্দোলনের রূপ নেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা রাজপথে নেমে আসে। তারা ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাজপথে বেরিয়ে এলে পুলিশ তাদের নির্বিচারে গুলি চালাতে থাকে। এতে অনেক ছাত্ররা নিহত হয়ে যায়। পরের দিন অর্থাৎ বাইশে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা পুনরায় রাজপথে নেমে আসেন। তারা একুশে ফেব্রুয়ারির নিহত ছাত্রদের জন্য গায়েবী জানাজা অংশগ্রহণ করে। ২৩ শে ফেব্রুয়ারি মেডিকেল কলেজে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেছিলেন তৎকালীন ছাত্ররা। ২৬ শে ফেব্রুয়ারি সেই স্তম্ভগুলোকে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। তখন ছাত্ররা একুশে ফেব্রুয়ারীর ঐ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আরো আন্দোলন শুরু করে দেয়। ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক সরকার নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করে ঐ বছরে ৭ই মে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বক্তৃতা
আমাদেরকে বিভিন্ন সময় প্রযোজনের তাগিতে বিভিন্ন জায়গায় বক্তৃতা প্রদানের প্রয়োজন পড়ে যায়। কিন্তু আমরা অনেকেই বক্তৃতা প্রদানের ক্ষেত্রে অপারগতা দেখাই। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আমরা একটি বক্তৃতার নমুনা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি এ বক্তৃতা থেকে আপনারা সুন্দরভাবে একটি বক্তৃতা তৈরি করে আপনাদের প্রয়োজন অনুযায়ী বক্তব্য প্রদান করতে পারবেন।
সাদর সম্ভাষণ জানানো
আজকের এই বিশেষ দিনে এখানে উপস্থিত রয়েছেন মাননীয় সভাপতি, উপস্থিত রয়েছেন আমার সহকর্মীবৃন্দ, এবং সামনে বসা উপস্থিত দর্শকবৃন্দ সবাইকে আমি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি এবং সবাইকে সালাম জানাচ্ছি আসসালামু আলাইকুম। হিন্দু দাদা- ভাইদের জানাচ্ছি আদাব।
আজ একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সেই সকল শহীদদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছি যারা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে মাতৃভাষা বাংলাকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই সাথে স্মরণ করছি বাংলার দামাল ছেলেরা যারা বাংলা ভাষায় প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে অনন্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। সেই- সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার সহ আরো অনেকে।
সম্মানিত সুধী,
ভাষা শুধু মুখের কথাই নয়, এটি আমাদের একটি মৌলিক অধিকার। আত্ম- সম্মানবোধের অধিকার। সেই অধিকার আদায় করতে গিয়েই আজকে আমাদের ভাইয়েরা শহীদ হয়ে গেছেন। তাদের এই আত্মত্যাগ আমরা কোনদিন ভুলতে পারবো না। তাদের এই আত্মত্যাগের কথা ইতিহাসের সর্নাক্ষরে সারা জীবন লেখা থাকবে। সেই সকল ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আজকে আমাদের বক্তৃতা শুরু করছি।
ভাষা আন্দোলনের পটভূমি
১৯৫২ সালের আজকের এই দিনে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আমাদের মুখের ভাষা, বাংলা ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু বাংলার দামাল ছেলেরা তা মেনে নিতে পারেনি তারা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে তাদের মায়ের ভাষা ছিনিয়ে নিয়েছিল তাদের এই আত্মত্যাগের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনা ভাষাকে ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো আজকের এই দিনে অর্থাৎ একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। এবং পরবর্তী বছর থেকে আজ পর্যন্ত একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে। এটি শুধু আমাদের বাংলাদেশের অধিকার আদায়ের জন্য নয় সারা বিশ্বের ভাষা প্রেমিকদের জন্য একটি অবিস্মরণীয় দিন।
একুশের চেতনা বাস্তবায়নে আমাদের করণীয়
মহান একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনাকে আমাদের বুকে ধারণ করতে হবে। আমাদের ভাষাকে কোন ভাবেই বিকৃত হতে দেওয়া যাবে না। বর্তমান সময়ে আধুনিক যুগে আমরা অনেকেই বাংলা ভাষাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে জানি না। এটি আমাদের জন্য খুবই লজ্জাজনক ব্যাপার। বাংলা ভাষার অধিকারের কথা আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। বাংলার ইতিহাস ও সংস্কৃতি, ঐতিহ্যকে আমাদের লালন করতে হবে।
শেষ কথা
আসুন সকলে মিলে ভাষার জন্য যাদের জীবন দিতে হয়েছে তাদের জন্য আমরা আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।একুশের চেতনাকে পুনরুজ্জীবিত করি। সকল অন্যায়- অবিচারের বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়াই। আমাদের নতুন প্রজন্মকে বাংলার ভাষার শিক্ষায় শিক্ষিত করি। বাংলা ভাষার ব্যাপ্তি আমরা সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দেই। মহান একুশে ফেব্রুয়ারি অমর হোক, সফল হোক।
একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন
প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হচ্ছে যথাযথ মর্যাদা সহিত। রাত ১২ঃ০১মিনিটে থাকছে প্রধান উপদেষ্টা সহ অন্যান্য উপদেষ্টা গণের সহিত মিনারের পুষ্প স্তবক অর্পণ করা। এরপর থেকেই সারা দেশের অপমার জনগণ শহীদ মিনারে পুষ্প স্তবক অর্পণ করবেন। সবাই কালোবাজ ধারণ করবেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ র্যালি ও বিভিন্ন রচনা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবেন। আরো থাকছে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যথাযথ মর্যাদার শহীদ আমাদের এই দিনটিকে পালন করা উচিত।
বর্তমানে বাংলা ভাষাকে বিকৃত করে অন্যান্য ভাষা আমাদের দেশে বিশেষ ভাবে স্থান দখল করে নিচ্ছে। আমরা যেন এখন ভাষাকেই ভুলে গেছি। এটা আমাদের কখনোই কাম্য হতে পারে না। ভাষা শুধু আমাদের মুখের বুলিই নয়। এটি আমাদের একটি অহংকারের বিষয়, গর্বেরের বিষয়। ভাষার জন্য শহীদ হয়েছেন এরকম দেশ আপনি কোথাও খুঁজে পাবেন না। একমাত্র বাংলাদেশিরাই বাংলাদেশকে ভালবেসে, বাংলা ভাষাকে ভালোবেসে পাকিস্তানি পরাশক্তিকে পরাজিত করে নিজের মাতৃভাষাকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। এটি আসলে আমাদের একটি অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। আসুন আমরা বাংলা ভাষাকে ভালোবাসি। বাংলা ভাষার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করি।