National & International Day

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কবে থেকে পালিত হচ্ছে ২০২৫

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস অমর হোক! সফল হোক!। প্রতিবছর আজকের এই দিনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশ্বের কয়েকটি দেশে পালিত হয়ে আসছে। পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর কাছ থেকে বাংলার দামাল ছেলেরা তাদের মুখের ভাষা বাংলা ভাষাকে ছিনিয়ে এনেছিল ১৯৫২ সালে। পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু তখনকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মাতৃভাষা ছিল বাংলা। পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) তাদের রাষ্ট্রভাষা বাংলা মর্যাদা দেওয়ার জন্য দাবি জানান ।

আমরা আজকে আমাদের প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কবে থেকে পালিত হচ্ছে, কত তম অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়।এ বিষয়ে যাবতীয় তথ্য এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হবে। আপনারা এই প্রতিবেদনটি মনোযোগ সহকারে পাঠ করলে এখান থেকে এ বিষয়ে যাবতীয় তথ্য পেয়ে যাবেন। আশা করছি যে আপনাদের এই প্রতিবেদনটি অনেক ভালো লাগবে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এর পটভূমি

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন করে। এ রাষ্ট্র গঠনের পর পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী তাদের একমাত্র ভাষা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দু ভাষাকে সর্বত্র চাকরি দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশ এবং তখনকার পূর্ব পাকিস্তান এর সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষদের মাতৃভাষা ছিল বাংলা। ১৯৪৮ সালের পাকিস্তানের গণপরিষদ গঠন করা হয় সর্বপ্রথম ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করার জন্য দাবি জানান। এরপর থেকেই বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র করার রাষ্ট্রভাষা করার জন্য প্রতিবাদ শুরু হয়ে যায়। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা রাজপথে নেমে আসেন  বিক্ষোভ করার জন্য।এ সময় পাকিস্তানি পুলিশ ঐ সকল ছাত্রদের ওপরে নির্বিকারে গুলি চালায়। এতে অনেক ছাত্ররা প্রাণ হারান। তাদের মধ্যে রয়েছে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার সহ আরো অনেকেই। এক পর্যায়ে এই আন্দোলন আরো তীব্র থেকে তীব্রতর আকার ধারণ করে। একসময় বাংলার দামাল ছেলেদের এই আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কবে থেকে পালিত হচ্ছে ?

প্রবাসী বাঙালি রফিকুল ইসলাম ও আব্দুস সালাম এর উদ্যোগে বাঙালি দামাল ছেলেরা বাঙালির আত্মত্যাগের ঘটনা বিশ্ব বিশ্ববাসীর কাছে উত্থাপন করা হয়।জাতিসংঘ কর্তৃক ১৯৯৮ সালে ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃ দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব ঘোষণা করা হয়। এবং বাংলাদেশের সরকারের সমর্থনে এই প্রস্তাব ইউনেস্কোর কাছে প্রস্তাবিত হয়। ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক হিসেবে ঘোষণা করে। এর পরবর্তী বছর থেকে অর্থাৎ ২০০০ সাল থেকে ২১ শে ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। ভাষার জন্য এত আত্মত্যাগের ঘটনা বিশ্বের আর কোন দেশে ঘটেনি। ভাষার জন্য এই আত্মত্যাগের ঘটনা আজ বিশ্বের সব ভাষাভাষী মানুষের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এর স্বীকৃতি লাভ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করে ১৯৯৯ সালের ১৭ ই নভেম্বর। সেই সময়ে দুজন বাংলাদেশি প্রবাসী কানাডায় বাংলাদেশী ভাষা আন্দোলনকে স্বাগত জানিয়ে বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে গ্রহণ করার জন্য রফিকুল ইসলাম এবং আব্দুস সালাম নামের এই দুই ব্যক্তি ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেন। উনারা বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।এরই ধারাবাহিকতায় ইউনেস্কো ও তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করেন। ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। সেই থেকে আজ পর্যন্ত বাঙালির আত্মত্যাগের ফসল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা বাংলা। বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার গুরুত্ব

আমাদের জাতীয় জীবনে মাতৃভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলা ভাষা শুধু একটি ভাষায় নয়, এটি আমাদের জন্য একটি গর্বের বিষয়। একটি ভাষা একটি জাতির জন্য অস্তিত্ব। আমাদের সব ক্ষেত্রেই মাতৃভাষার প্রয়োজন রয়েছে। এই ভাষার মাধ্যমে আমরা একে অপরের প্রতি ঐক্যবদ্ধ থাকি। ভাষার মাধ্যমে আমরা নিজের ভাব গুলোকে প্রকাশ করি। মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য যদি মাতৃভাষা না থাকে তাহলে আমরা মনের ভাব প্রকাশে কোন রকম উৎসাহ বোধ করব না। সেজন্যই কবি বলেছেন “নানান দেশের নানান ভাষা, বিনা স্বদেশী ভাষা, পুড়ে কি আশা”। অতএব স্বদেশী ভাষার মূল্য অনেক বেশি।

মাতৃভাষা রক্ষার্থে আত্মত্যাগ

১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে  মিছেলে অংশগ্রহণ করে। তখন পাকিস্তানি পুলিশদের হাতে তারা লাঞ্ছিত হয়ে রক্তে রঞ্জিত হয়ে নিজেকে বিসর্জন দিয়েছিলেন। এই দিনেই নাম না জানা অনেকেই প্রাণ হারান। তাদের এই আত্মত্যাগ বিশ্বের ইতিহাসে বিরল হয়ে আছে। একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু একটি দিন নয়, ভাষা আন্দোলনের একটি দিন নয়, এটি আমাদের আত্ম পরিচয়ের জন্য একটি গৌরমময় দিন। এবং আত্মপরিচয়ের লড়াইয়ের প্রতীক।। এই দিনের যে সকল ভাইয়েরা শহীদ হয়েছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি আমরা সকলেই।

বর্তমান সময়ের বাংলা ভাষা

যে ভাষার জন্য আমাদের এতগুলো প্রাণ ঝরে গেল সেই  বাংলাদেশেই আজকে বিভিন্ন ভাষার সংমিশ্রণ আমরা লক্ষ্য করতে পারছি। আজকাল বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাষার বিকৃতি দেখলে নিজেকে লজ্জিত মনে হয়।। কেননা যে ভাষার জন্য আমরা যুদ্ধ করেছি সেই ভাষাতে  বিভিন্ন ভাষার সংমিশ্রণের ফলে আমাদের বাংলা ভাষা হয়ে গেছে বিকৃত হয়ে গেছে। ইংরেজি, আরবি, উর্দু সকল ভাষার সংমিশ্রণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন স্ট্যাটাস গুলোতে। আমাদের সকলের উচিত এগুলোকে বর্জন করা। আমাদের দেশে বর্তমান ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল কলেজের অভাব নেই। এ সকল প্রতিষ্ঠান গুলোতে ইংরেজি ভাষার আমাদের সন্তানদেরকে শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে।ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের বাংলা ভাষা থেকে অনেক পিছিয়ে যাচ্ছে। বাংলা ভাষার ইতিহাস,ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে  সম্পর্কে তারা জানতেই পারতেছে না। আমাদের সকলের উচিত আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাংলা ভাষার ইতিহাস সম্পর্কে জানা।

তাই আসুন সকলে মিলে বাংলা ভাষার বিস্তার সর্বত্র ছড়িয়ে দেই। বাংলা ভাষাকে নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি। বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্যকে বুকে লালন করি। একুশের চেতনাকে বুকে ধারণ করি। আমরা আমাদের দেশে লক্ষ্য করে দেখি যে শুধুমাত্র ২১ শে ফেব্রুয়ারি আসলেই ভাষার কথা বিভিন্ন গণমাধ্যম, সংবাদপত্রে প্রকাশ করা হয় আর অন্যান্য সময় বাংলা ভাষার গুরুত্বকে তেমনভাবে লক্ষ্য করা যায় না। এটি আমাদের জন্য একটি কলঙ্কিত বিষয়। মহান একুশে ফেব্রুয়ারি অমর হোক, সফল হোক এই প্রত্যাশা শেষ করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *