শবে কদরের গুরুত্ব, ফজিলত ও হাদিস ২০২৫

আসসালামু আলাইকুম। আপনারা পবিত্র মাহে রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত শবে কদরের রাতের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে জানার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছেন এজন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানানো হচ্ছে। পবিত্র লাইলাতুল কদর অনেকেই এই দিনটিকে শবে কদর বলে অভিহিত করেছেন। লাইলাতুল কদর বা শবে কদর সমস্ত মুসলিম উম্মার জন্য একটি মহিমান্বিত রাত। লাইলাতুল শব্দের অর্থ হচ্ছে রাত, এজন্য এ রাতে শবে কদরের রাত বলা হয়। হাদিস শরীফে বর্ণিত রয়েছে যে এই মহিমান্বিত রাত্রি হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রাত। এ রাতে বিশেষ ইবাদতের মধ্য দিয়ে মহান রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য লাভ করা সম্ভব।
সম্মানিত পাঠক, আপনি যেহেতু পবিত্র এই মাহে রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ এই রাতের বিষয়ে অনুসন্ধান করছেন অবশ্যই আপনি আল্লাহতালার নৈকট লাভের জন্য চেষ্টা করছেন। আল্লাহ তায়ালা আপনার সকল ইবাদতগুলোকে কবুল করে নিন। আমরা আমাদের প্রতিবেদনের মাধ্যমে মহিমান্বিত এই রাত সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরব।। আশা করছি এখান থেকে আপনি এ বিষয়ে সকল ধারণা পেয়ে যাবেন।
লাইলাতুল কদর বা শবে কদর নিয়ে কিছু কথা
সারা বিশ্বের মুসলমানগণ এ রাতকে কেন্দ্র করে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকেন । বাংলাদেশের বিভিন্ন মসজিদে এই রাত্রে কেন্দ্র করে আনুষ্ঠানিকভাবে ইবাদতের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। সারা রাত্রি সালাত আদায়, জিকির-আজগার, কোরআন তেলাওয়াত এর মধ্য দিয়ে রাত্রিকে অতিবাহিত করে থাকেন। আমাদের দেশের সাধারণত অনেকেই ধারণা করে থাকেন শুধুমাত্র ২৭ এ রমজানের রাত্রিতে শবে কদর হয়ে থাকে কিন্তু এই বিষয়টি আসলে অনেকটাই ভুল ধারণা কেননা এ সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে পবিত্র মাহে রমজানের শেষ দশকের রাত্রিগুলোতে শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং আমরা যারা এ রাতকে পেতে চাই তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাত্রিগুলোতে বিশেষ ইবাদতের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করতে হবে। এ কারণেই অনেকেই রমজানের শেষ ১০ দিন ইত্তেকাফে থাকেন। কেননা ইত্তেকাফের মধ্য দিয়ে শবে কদর তালাশ করা অনেকটাই সহজ হয়ে থাকে। শবে কদর প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকে না।
লাইলাতুল কদর বা শবে কদর সম্পর্কে হাদিস
শবে কদর যেহেতু একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং মহিমান্বিত রাত এ সম্পর্কে হাদিস শরীফে বিশেষ ভাবে কিছু হাদিস বর্ণিত রয়েছে। যেগুলো অনুসরণ করা প্রত্যেকটি মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। লাইলাতুল কদর পাওয়া সমস্ত মুসলিম উম্মার জন্য একটি সৌভাগ্যের ব্যাপার। কেননা শুধুমাত্র হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর উম্মত ছাড়া এ রাত্রি অন্য কোন নবী রাসূলের জন্য গ্রহণযোগ্য হয়নি। আমরা আমাদের প্রতিবেদনের এই অংশে লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের গুরুত্বপূর্ণ কিছু হাদিস উল্লেখ করব।
- পবিত্র কোরআনে উল্লেখ রয়েছে, আল্লাহ তায়ালার বলেছেন, মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম কে উদ্দেশ্য করে, “হে রাসুল নিশ্চয়ই আমি নাযিল করেছি কুরআন মহিমান্বিত রাত্রিতে। আপনি কি জানেন? এ রাত্রি কি? এ রাত্রি হাজার মাসের চেয়েও একটি শ্রেষ্ঠতম রাত। এ রাতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাগণ এবং রূহ তাদের প্রতিপালকের আদেশক্রমে অবতীর্ণ হয়। এই রাত্রি শুধু শান্তি আর শান্তি ফজর হওয়া পর্যন্ত”— আল কদর ১ -৫আয়াত
- মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেন, “যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমানের সহিত সওয়াব লাভের আশায় সিয়াম সাধনা করবে,সে ব্যক্তির জীবনের গুণা গুলোকে ক্ষমা করে দেওয়া করে দেওয়া হবে এবং যে ব্যক্তি সওয়াব লাভের আশায় সালাত আদায় করবে তার জীবনের গুলো মাফ করে দেওয়া হবে”
- নবী করিম সাঃ বলেন, “যে ব্যক্তি শবে কদর সন্ধান প্রত্যাশী সে যেন রমজানের শেষ সাত রাতে তা অনুসন্ধান করে”
- হযরত আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত রাসূল বলেছেন, “তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান কর”— মুসলিম হাদিস ১৩/৪০
লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের গুরুত্ব
শবে কদরের রাতটি গুরুত্বপূর্ণ ও মহিমান্বিত রাত এই রাতে পবিত্র মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাযিল হয়েছে। এছাড়াও এ রাতের গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি বিষয়ে রয়েছে লাওহে মাহফুজ থেকে ফেরেশতাদের হাতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। পবিত্র মহাগ্রন্থ আল কুরআনে এই বিশেষ রজনীর জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা অবতীর্ণ করা হয়েছে, যা কেয়ামত পর্যন্ত পাঠ করা হবে। এছাড়াও বিশেষ এই রজনীতে ফেরেশতাগণ এ রাতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের বিষয়ে ক্ষমতা অর্পণ করা হয়। সুতরাং এই রাতে আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত। এ রাতে ফেরেশতাগণ রহমত, বরকত ও কল্যাণ নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করে থাকেন। আমরা এ রাতে বেশি বেশি ইবাদতের মধ্য দিয়ে মহান রব্বুল আলামিনকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করুন।
লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের ফজিলত
লাইলাতুল কদরের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী করীম সাঃ বলেছেন যে, “যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমানের সহিত সালাত আদায় ও বন্দেগী করবে আল্লাহ তাআলা তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেবেন”। এ রাতকে ভাগ্য নির্ধারণের রাত হিসেবে ধরা হয়। এ রাতের ফজিলত এত বেশি যে তার নির্দিষ্ট সংখ্যায় পরিমাপ করা হয়নি বরং বলা হয়েছে যে লাইলাতুল কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। আল্লাহতালা এই রাতের ইবাদতকে হাজারগুণ বৃদ্ধি করে দিয়ে বান্দাদের সওয়াব লাভের সুযোগ-সুযোগ করে দেন। শবে কদরের পুরস্কার হিসেবে আল্লাহতালা জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করবেন। আমরা এ রাতে বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগির মধ্য দিয়ে মহান রব্বুল আলামিনকে খুশি ও রাজি করার চেষ্টা