Ramadan 2025

শবে বরাতের নামাজের নিয়ম,কত রাকাত ও কি কি, দোয়া এবং করণীয় ও বর্জনীয় ২০২৫

হিজরি বর্ষ পঞ্জিকা অনুযায়ী সাবান মাস হলো অষ্টম তম মাস। শাবান মাসের ১৪ তারিখ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যবর্তী রাতকে শবে বরাতের রাত হিসেবে ধরা হয়। এবার শবে বরাত শব্দের অর্থ হল শবে শব্দের অর্থ হচ্ছে রাত আর বারাত শব্দের অর্থ হলো মুক্তি। শবে বরাতের অর্থ হল মুক্তির রাত বা  মুক্তির রজনী। আরবি পরিভাষায় এ রাতের সময়টাকে “লাইলাতুল নিসফি মিন শাবান” বলা হয়ে থাকে। এ রাতে মহান রাব্বুল আলামিন বান্দাদের সকল গুনাহগুলোকে মাফ করে দেন। তাই এর বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে মহান রব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি অর্জন করার চেষ্টা করবেন।

হাদিসে বর্ণিত রয়েছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন, এ রাতে মহান রাব্বুল আলামিন বান্দাদের দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক এবং বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দেন-ইবনে মাজাহ।  এ রাতের মহিমান্বিততা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য তাই আজকে আমরা আমাদের প্রতিবেদনে শবে বরাতের গুরুত্বপূর্ণ কিছু ইবাদত এর বিষয়ে আলোচনা করব। আপনারা মনোযোগ সহকারে প্রতিবেদন পাঠ করুন।

 শবে বরাতের নামাজের নিয়ম

শবে বরাতের নামাজের জন্য আলাদা কোন নিয়মের প্রয়োজন নেই তবে শবে বরাতের রজনীতে যেহেতু আপনি নফল সালাত আদায় করছেন সেহেতু আপনাকে শবে বরাতের সঠিক সময়ে সালাত আদায় করতে হবে। শবে বরাতের রাতে এশার সালাত আদায়ের পরে দুই রাকাত নফল সালাত আদায় করতে পারেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর রাতে নফল সালাত আদায় করতেন। পাশাপাশি আপনি শবে বরাতের রাতে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায়ের মাধ্যমে দুই রাকাত করে মোট ছয় রাকাত নফল সালাত আদায় করতে পারেন। এছাড়াও আপনার জীবনের পরবর্তী যে সকল ফরজ সালাত আদায় করতে পারেননি সে সকল সালাতের কাজা সালাত আদায় করতে পারেন। এছাড়াও সালাতুল তসবিহ নামাজ আদায় করতে পারেন এই মহিমান্বিত রাতে।

 শবে বরাত নামাজের নিয়ত

“নাওয়াইতুআন্ উছল্লিয়া লিল্লা-হি তাআ-লা- রাকআতাই ছালা-তি লাইলাতিল বারা-তিন্ -নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল্ কাবাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আকবার”।

বাংলা নিয়ত এর মাধ্যমে মাধ্যমে সালাত আদায় করা যায়। বাংলা নিয়ত হচ্ছে,”শবে বরাতের দুই রাকাত নফল সালাত ঈমানের শহীদ কেবলা মুখী হইয়া আল্লাহু আকবার”।

শবে বরাতের রাতের দোয়া

শবে বরাতে শুধুমাত্র নকল সালাত আদায় করার বিধান রয়েছে। কোন প্রকার সম্মিলিত ইবাদতের প্রয়োজন নেই। শবে বরাত মুসলিম জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।এ রাতে বেশি বেশি দোয়া দুরুদ পাঠ করতে হবে। এই রাতে হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, মুসলিমদের জন্য যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাত রয়েছে ইবাদতের জন্য তার মধ্যে শবে বরাতের রাত্রি একটি। শবে বরাতের যে সকল দোয়া পাঠ করবেন আমরা আমাদের প্রতিবেদনের এই অংশে সেই সকল দোয়াগুলো উপস্থাপন করছি।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি লাভের জন্য এই সকল দোয়াগুলো পাঠ করতে পারেনঃ

رَبِّ أَوْزِعْنِىٓ أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِىٓ أَنْعَمْتَ عَلَىَّ وَعَلٰى وٰلِدَىَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صٰلِحًا تَرْضٰىهُ وَأَدْخِلْنِى بِرَحْمَتِكَ فِى عِبَادِكَ الصّٰلِحِينَ
এর বাংলা উচ্চারণ-
“রাব্বি আওঝি’নি আন আশকুরা নি’মাতাকাল্লাতি আনআমতা আলাইয়্যা ওয়া আলা ওয়ালিদাইয়্যা ওয়া আন আ’মালা সালেহাং তারদাহু ওয়া আদখিলনি বিরাহমাতিকা ফি ইবাদিকাস সালিহিন।’ (সুরা নামল : আয়াত ১৯)

اَللَّهُمَّ اِنِّى اَعُوْذُبِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْجُبْنِ وَالْبُخْلِ وَ ضَلَعِ الدَّيْنِ وَ غَلَبَةِ الرِّجَالِ

এর বাংলা উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি ওয়াল আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি ওয়া দালায়িদ দাইনি ওয়া গালাবাতিল রিজালি।’ (বুখারি ও মুসলিম, মিশকাত)

اَللَّهُمَّ اِنِّى اَعُوْذُبِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَاَعُوْذُبِكَ مِنَ الْبُخْلِ وَاَعُوْذُبِكَ مِن اَرْذَلِ الْعُمُرِ وَ اَعُوْذُبِكَ مِن فِتْنَةِ الدُّنْيَا وَ عَذَابِ الْقَبْرِ
এর বাংলা উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল জুবনি ওয়া আউজুবিকা মিনাল বুখলি ওয়া আউজুবিকা মিন আরজালিল উমুরি ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিদ দুনিয়া ওয়া আজাবিল কাবরি।’ (বুখারি ও মিশকাত)

اَللَّهُمَّ اِنِّى اَعُوْذُبِكَ مِن جَهْدِ الْبَلَاءِ وَ دَرَكِ الشَّقَاءِ وَ سُوْءِ الْقَضَاءِ وَ شَمَاتَةِ الْأَعْدَاءِ
এর বাংলা উচ্চারণ:
‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন জাহদিল বালায়ি ওয়া দারাকিশ শাক্বায়ি ওয়া সুয়িল ক্বাজায়ি ওয়া শামাতাতিল আ’দায়ি।’

اَللَّهُمَّ اكْفِنِىْ بِحَلَالِكَ عَنْ حَرَامِكَ وَأَغْنِنِىْ بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ

এর বাংলা উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মাকফিনি বিহালালিকা ওয়া হারামিকা ওয়া আয়িন্নি বিফাজলিকা আম্মান সেওয়াকা।’

শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত ও কি কি

শবে বরাতের কোন ফরজ বা সুন্নত ইবাদত নয় এটি একটি নফল ইবাদত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর রাতে দুই রাকাত করে মোট ছয় রাকাত সালাত আদায় করেছিলেন। এক্ষেত্রে আমাদেরকে দুই রাকাত করে মোট ছয় রাকাত নফল সালাত আদায় করা যাবে। তবে এ সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত রয়েছে যে শবে বরাত যেহেতু মহিমান্বিত একটি রজনী এ রজনীতে আপনি সারারাত ইবাদতের মাধ্যমে সময় কাটাতে পারেনন তবে আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী যতটুকু সম্ভব ইবাদত করবেন।

শবে বরাত রাতে করনীয় এবং বর্জনীয়

শবে বরাত মুসলিম জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত। বেশি বেশি ইবাদত বন্দিদের মাধ্যমে মহান রব্বুল আলামিনকে সন্তুষ্ট করতে হবে। এ রােত বিশেষ বিশেষ করনীয়দের মধ্যে রয়েছে বেশি বেশি নফল ইবাদত নফল সালাত আদায় করা এবং দিনের মধ্যে সিয়াম পালন করা।  এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাত আসবে সেখানে তোমরা দাঁড়িয়ে নফল সালাত আদায় করবে এবং দিনে রোজা রাখবে। এছাড়াও এ রাজনীতিতে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত, তসবি তাহলীল পড়ে ইবাদত করার বিধান রয়েছে।

আমাদের সমাজে বর্তমান সময়ে পরিচালিত প্রচলিত রয়েছে শবে বরাতে হালুয়া রুটি, গরুর মাংস দিয়ে খাওয়ার। এটি সম্পূর্ণরূপে ইসলাম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। পাশাপাশি কোন ধরনের আতশবাজি,  জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান এ রজনীতে করা যাবেনা।পাশাপাশি সারারাত বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগী করার  কারণে যাতে ফজরের সালাত নষ্ট না হয় সেদিকে আপনাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। মনে রাখবেন শবে বরাতের সালাত আদায় করা নফল কিন্তু ফজরের সালাত আদায় করা ফরজ। সুতরাং বেশি বেশি নফল আদায় করতে গিয়ে আপনি আপনি যেন ফরজ থেকে বঞ্চিত না হন সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

আমরা দুনিয়ার জীবনে ক্ষণস্থায়ী সময়ে বসবাস করবো। আমাদের সবাইকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে মহান রাব্বুল আলামিনকে সন্তুষ্ট করার জন্য আমাদের নিজেকে ইবাদতের মধ্যে ডুবিয়ে রাখতে হবে। আসুন বেশি বেশি করে ভালো কাজ করি। মহান রাব্বুল আলামিনকে সন্তুষ্ট করি। আল্লাহ যেন আমার আমাদের পূর্ববর্তী জীবনের গুনাগুলো মাফ করে দেন এবং জীবনের বাকি সময়টুকু ভালো ভাবে ঈমানের সহিত কাটাতে পারি। আল্লাহ যেন আমাদেরকে সেই তৌফিক দান করেন। আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *