Ramadan 2025

মাহে রমজান কবে? ২০২৫ সালের রোজার সময়সূচী 

আরবি বর্ষপঞ্জিকা পরিচালিত হয় চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে। ফলে চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে হিজরী বছরের মাস গণনা শুরু হয় অর্থাৎ হিজরি অথবা আরবি বছরের মাসগুলো শুরু হয় চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে। চন্দ্র যেদিন  পশ্চিম আকাশে লক্ষ্য করা যায় প্রতিটি মাস সেদিন থেকে গণনা শুরু হয়। বাংলা কিংবা ইংরেজি মাস গুলো সাধারণত পূর্ববর্তী মাস শেষ হওয়ার পরের দিন থেকেই শুরু হয়ে যায় কিন্তু আরবি মাস গুলো পুরোপুরি চন্দ্র এর উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে। আরবি যে মাস গুলো রয়েছে তার মধ্যে রমজান একটি মাস। এই মাসটি মুসলিম সমাজের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্যাদা পূর্ণ মাস। সারা বিশ্বের মুসলমানগণ এই মাসে ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে নিজেদেরকে মশগুল করে রাখে। পশ্চিম আকাশে সূর্যোদয়ের পরপরই চন্দ্র উদিত হয় ঠিক ওই রাতেই রমজানের জন্য তারাবির নামাজ আদায় করা হয়। এশার নামাজ আদায়ের পরেই মুসলিম জাতি রমজানের প্রথম তারাবির নামাজ আদায় করে থাকেন। এবং ওই রাতেই সূর্য  উদয়ের পূর্বে সেহরি গ্রহণ করে থাকেন সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ গণ।

পবিত্র মাহে রমজান মাসে রোজা রাখা আমাদের প্রতিটি মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। মুসলিম সমাজের জন্য যে সকল গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত রয়েছে যেমন কলেমা, নামাজ, হজ্জ, যাকাত তার মধ্যে রোজা রাখা একটি ইবাদত। অর্থাৎ ইসলামের যে পাঁচটি স্তম্ভ রয়েছে তার মধ্যে রোজা একটি। সম্মানিত মুসলিম তৌহিদী জনতা যারা অনলাইনে এসে বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে রোজার সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চান তাদের জন্য আমাদের নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। ২০২৫ সালের রোজা কবে থেকে শুরু হচ্ছে এবং  ২০২৫সালের সেহরি ও ইফতারের পূর্ণাঙ্গ সময়সূচি আমাদের  আজকের প্রতিবেদনে আলোচনা করা হবে। আপনারা মনোযোগ সহকারে প্রতিবেদনটি পাঠ করলে রমজানের রোজার পূর্ণাঙ্গ সূচি সহ বেশ কিছু তথ্য এখান থেকে পেয়ে যাবেন।

 রোজার তাৎপর্য ও শিক্ষা

রোজা শব্দের অর্থ হচ্ছে বিরত থাকা। রোজা শব্দের আরবি শব্দ হচ্ছে সিয়াম বা সওম। সওম শব্দের অর্থ হচ্ছে আল্লাহ সন্তুষ্টি  অর্জনের কামনা করা। সিয়াম সাধনা করা প্রত্যেকটি মুসলমানের জন্য ফরজ ঘোষণা করা হয়েছে। এ সম্পর্কে সূরা বাকারার একটি আয়াত রয়েছে, সেখানে বলা রয়েছে “তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্বপুরুষ গনের উপর”। যাতে তোমরা আল্লাহ ভীরু হতে পারো এবং পরহেজগার হতে পারো। সুতরাং এই আয়াত থেকে আমরা এটা উপলব্ধি করতে পারি যে, রোজা শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকা নয় আল্লাহর উপরে তাকওয়া অর্জন করতে হবে। এবং আল্লাহকে ভয় করার মতো ভয় করতে হবে।আল্লাহর সন্তুষ্টি  অর্জনের জন্য এবাদত বন্দেগি সহ নিজের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে হবে। তবেই আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারব। রমজান মাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ রোজা হচ্ছে ২৭শে রমজান অর্থাৎ শবে কদর। এই শবে কদর রাতে আল্লাহতালা চতুর্থ আসমানে নেমে আসেন এবং তার বান্দাদের প্রতি রহমত বর্ষণের জন্য নজরদারি করতে থাকেন। এ রাতে যারা ইবাদত বন্দেগির মধ্যে নিজেকে জড়িয়ে রাখে এবং আল্লাহর কাছে নিজের গুনাহ মাফ এবং কিছু চাইতে থাকে আল্লাহ তা পূরণ করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আমরা যেমন অর্থ সম্পদের পরিশুদ্ধির জন্য যাকাত প্রদান করে থাকি ঠিক তেমনি রোজা হচ্ছে শরীরের যাকাত। শরীরকে পানাহার থেকে  বিরত রেখে শরীরে যাকাত প্রদান করা হয়। এই রোজার মাধ্যমে মহান রাব্বুল আলামিন এরশাদ করেছেন যে, “রোজা শুধুমাত্র আমার জন্য আমি এর উত্তম প্রতিদান দেব”। সুতরাং বুঝতে পারছেন আল্লাহ তায়ালা যদি নিজেই রোজার প্রতিদান দিতে চান তাহলে তার প্রতিদান কি রকম হতে পারে। কারণ তার রয়েছে অফুরন্ত ভান্ডার।এই অফুরন্ত ভান্ডার থেকে আপনি কিঞ্চিৎ পরিমাণও যদি পেয়ে যান তাহলে আপনি অবশ্যই জান্নাতের স্থায়ী বাসিন্দা হতে পারবেন।

পবিত্র মাহে রমজান কবে থেকে?

ইংরেজি বছরগুলোতে প্রতিটি বছর ৩৬৫ দিন ধরে নির্ধারিত করা হয়ে থাকে। আবার আরবি বছর ৩৫৩ দিন থেকে ৩৫৫ দিনের মধ্যে নির্ধারিত হয়ে থাকে। আরবি বা হিজরী মাস গুলো সাধারণত ২৯ কিংবা ৩০ দিনের মধ্যে পূর্ণ হয়ে থাকে। এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে চন্দ্র এর ওপর। যেহেতু ইতিমধ্যেই সবে মেরাজ অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে সেই সূত্র অনুযায়ী আগামী ০১ মার্চ অথবা ০২ মার্চ থেকে ২০২৫ সালের রমজান মাস শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আবার একটি সাধারন হিসেবে ধরা হয় যে প্রতিটি বছরে রমজান মাস পূর্ববতী বছরের ১১ থেকে ১২ দিন আগে শুরু হয়ে থাকে। এই হিসাবে গত বছর অর্থাৎ২০২৪ সালে রমজান শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ সময় ১২ই মার্চ এবং সৌদি আরব সহ অন্যান্য দেশে শুরু হয়েছিল ১১ মার্চ থেকে। এই দিক থেকে হিসাব করলে আগামী ০২ মার্চ (দুই মার্চ) রমজান শুরু হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।

২০২৫ সালের রোজার সময়সূচী

গত ২৭ শে জানুয়ারি ২০২৫ ইং তারিখে বাংলাদেশ সময়ে শবে মেরাজ পালিত হয়েছে। এই সূত্র ধরে বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন আগামী ১৪ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ইং তারিখে শবে বরাত হবে বলে নির্ধারিত করেছেন। যদিও সেটি চাঁদ দেখার উপরে নির্ভরশীল। যদি আগামী ১৪ই ফেব্রুয়ারি শবে বরাত অনুষ্ঠিত হয় তাহলে ফেব্রুয়ারি মাসের ২৮ তারিখ অথবা মার্চের প্রথম দিন রমজানের চাঁদ দেখা যেতে পারে। এই অনুযায়ী ইসলামী ফাউন্ডেশন রমজান মাসের একটি পূর্ণাঙ্গ ইফতারের ও সেহরির সময়সূচি প্রকাশ করেছে। আমাদের প্রতিবেদনের এই অংশে ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর সময়সূচী উপস্থাপন করা হচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই সময় সময়সূচির পরিপ্রেক্ষিতে কোন কোন এলাকার বা অঞ্চলেরকয়েক মিনিট যোগ করতে হবে বা বাদ দিতে হবে সে সম্পর্কেও পূর্ণাঙ্গ ধারণা দিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

যেহেতু এই সময়সূচি শুধুমাত্র ঢাকা জেলার জন্য নির্ধারিত হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে  ঢাকা থেকে দূরত্ব অনুযায়ী সর্বোচ্চ ০৯ মিনিট যোগ করে এবং দূরত্ব অনুযায়ী ০৯ মিনিট বিয়োগ করে সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি নির্ধারণ করার জন্য জানিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন সতর্কতার জন্য আরও একটি বিষয় নির্ধারণ করেছেন যে সেহরির সময়ের ০৬ মিনিট পরে ফজরের আযান দেওয়ার কথা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সতর্কতার জন্য ০৩ মিনিট বাড়িয়ে দিয়ে ইফতারের কথা বলে দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *