জন্ম নিবন্ধন যাচাই করুন কোড দিয়ে এবং অনলাইনে ২০২৫

বর্তমান সময়ে জন্ম নিবন্ধন চেক সকল নাগরিকের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পরই আমরা লক্ষ্য করে থাকি যে সেই অনলাইনে ডাটা গুলোতে অনেক তথ্য ভুল ভ্রান্তি রয়েছে। এতে করে সাধারণ নাগরিকদের নানান ধরনের সমস্যার ও জটিলতার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। এ সকল জটিলতা থেকে উত্তরনেরের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আমরা আমাদের নিজ ইউনিয়ন পরিষদে তথ্য সেবা কেন্দ্র থেকে এ সকল সমস্যার সমাধান করে জন্ম নিবন্ধন করে নিতে পারি। এবং এই জটিলতা থেকে সংশোধনের আপনার নিবন্ধন কার্যক্রমটি সঠিক হয়েছে কিনা তা একটি বিশেষ কোড ব্যবহারের মাধ্যমে চেক করে নিতে পারবেন।
আমরা আমাদের আজকের প্রতিবেদনটি সাজিয়েছি বর্তমান সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে যা সারা দেশের নাগরিকের বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে। অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করার পর আমাদের নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিশেষ একটি কোড ব্যবহারের মধ্য দিয়ে অনলাইন থেকে যাচাই করে নিতে পারি। আমরা আজকের প্রতিবেদন থেকে জন্ম নিবন্ধনের এই যাচাই প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরব। আপনার যদি এ বিষয়ে জানার আগ্রহ থাকে তাহলে অবশ্যই প্রতিবেদনটির শেষ পর্যন্ত পাঠ করে নিবেন। আশা করছি এ বিষয়ে যাবতীয় তথ্য আমরা প্রথম করতে পারবো এবং এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আপনারা পেয়ে যাবেন।
জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে?
জন্ম নিবন্ধন হলো জন্ম ও মৃত্যু আইন ২০০৪ এর ২৯ নং আইনের একটি বিধান।এই বিধানের নিয়ম অনুযায়ী একজন মানুষের জন্ম তারিখ, জন্মের স্থান, পিতা-মাতার নাম, স্থায়ী ঠিকানা, জাতীয়তা একটি রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ থাকতে হবে এবং তা সরকারি ওয়েবসাইটের লিপিবদ্ধ থাকবে।এতে করে বাংলাদেশের জনসংখ্যা কি পরিমান রয়েছে এবং আরো বিশেষ কিছু দিক নির্ণয় করা সরকারের জন্য সুবিধা জনক হবে। পাশাপাশি এই নিবন্ধনের মধ্য দিয়ে একজন মানুষের পূর্ণাঙ্গ তথ্য থাকার ফলে তাকে খুঁজে পেতে কিংবা তিনি কোন অবৈধ কাজে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ থাকবে না।তাই আমরা আজকের প্রতিবেদনে জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি ডকুমেন্ট বা কাগজপত্রের প্রয়োজন রয়েছে সে বিষয়ে উল্লেখ করছি-
বয়স শূন্য ০০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে হলে জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগবে?
- পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি ( বাংলা ও ইংরেজি ) এবং জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি।
- সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের জন্ম সনদের সত্যায়িত অনুলিপি। যেখানে জন্মগ্রহণের তারিখ উল্লেখিত থাকবে।
- ইউনিয়ন পরিষদের ট্যাক্স পরিশোধের রশিদের ফটোকপি। বাসা বা হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের রশিদের ফটোকপি।
- আবেদনকারী এক কপি ছবি। অর্থাৎ ০ থেকে ৪৫ দিনের শিশুর ছবি।
বয়স ৪৫ দিন থেকে ০৫ বছর পর্যন্ত হলে জন্ম নিবন্ধনেকরতে কি কি লাগে?
- ইপিআই কার্ড বা টিকার কার্ড এর সত্যায়িত ফটোকপি। অথবা ইপিআই টিকাদান কারীর প্রত্যয়ন পত্র।
- পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি বাংলা ও ইংরেজি এবং জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি
- ইউনিয়ন পরিষদের ট্যাক্স পরিশোধের রশিদের ফটোকপি। বাসা বা হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের রশিদের ফটোকপি।
- আবেদনকারী এক কপি ছবি। অর্থাৎ ৪৫দিন থেকে ০৫ বছরের শিশুর ছবি।
০৫ বছরের বেশি বয়স হলে জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে?
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সকল সনদের সত্যায়িত ফটোকপি।।
- পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি বাংলা ও ইংরেজি এবং জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি
- ইউনিয়ন পরিষদের ট্যাক্স পরিশোধের রশিদের ফটোকপি। বাসা বা হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের রশিদের ফটোকপি।
- আবেদনকারী এক কপি ছবি।
মোবাইল ফোনে এসএমএসের (SMS) মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করুন
বর্তমানে প্রযুক্তির উন্নত ব্যবহারের কারণে আমরা ঘরে বসেই বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে নিতে পারি।তেমনি বর্তমানেে ২০২৫ সালে এসে আমরা মোবাইল ফোনের এসএমএস বা বার্তা প্রধানের মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধনের তথ্য সংগ্রহ করে নিতে পারি।নিজে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করেছেন, তার সংশোধনের জন্য আবেদন করেছেন, কিংবা আপনার জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে আছে কিনা অথবা আপনার আদৌ জন্মদিন নিবন্ধন আছে কিনা এ সম্পর্কে জানতে মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়ে সঠিক তথ্য পেয়ে যাবেন। আমরা আমাদের প্রতিবেদনের এই অংশে মোবাইল ফোনে এসএমএস এর মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার প্রক্রিয়াটি সুন্দরভাবে উপস্থাপন করছি।
এসএমএস- এ জন্ম নিবন্ধন যাচাইর প্রক্রিয়া—
আপনার মোবাইলের মেসেজ অপশন এর রাইট মেসেজ অপশনে যান। টাইপ করুন: BRC < জন্ম নিবন্ধন নম্বর > ( উদাহরণ: BRC ১২৩৪৫৬৭৮৯ ) মেসেজটি পাঠান ১৬১০৩ নম্বরে।
ফিরতি এসএমএসের মাধ্যমে আপনাকে আপনার জন্ম নিবন্ধনের সঠিক তথ্য সহ এসএমএস পাবেন।
জন্ম নিবন্ধন অনলাইন যাচাইয়ের জন্য ব্যবহৃত কোড
আপনার জন্ম নিবন্ধন সম্পর্ণ হয়ে গেলে ১৭ সংখ্যার জন্ম নিবন্ধন নাম্বার ( Birth Registration Number – BRN ) দিয়ে অ্যাপসের মাধ্যমে অনলাইনে অনুসন্ধান করে তথ্য যাচাই করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ১৭ সংখ্যার ওই ডিজিটগুলো অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। এই ভিজিটগুলোর সঠিক না হলে আপনার তথ্য সঠিকভাবে প্রদর্শন করবে না বা তথ্য প্রদর্শিত হবে না। আপনি চাইলে যে কোন ফোন থেকে ঘরে বসেই আপনার যা অনলাইনের মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন এর ব্যবহৃত কোডটি ব্যবহার করে জন্ম নিবন্ধনের তথ্য যাচাই করে নিতে পারবেন।
কোড ব্যবহার করে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাইয়ের ধাপসমূহ
আমরা আমাদের প্রতিবেদনের এই অংশে জন্ম নিবন্ধন যাচাইয়ের জন্য যে অনলাইনে অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে যে সকল নিয়ম নীতিবাদ ধাপ অনুসরণ করে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করা হয় সে সকল ধাপগুলো আলোচনা করা হবে।এই ধাপগুলো আপনারা যে কোন মোবাইল থেকে অথবা কম্পিউটার থেকে বাংলাদেশের যেকোনো জায়গা থেকে অনুসরণ করে অথবা এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করে নিতে পারবেন। আমরা এই ধাপগুলো প্রতিবেদনের নিচের অংশ উপস্থাপন করছি-
- সর্বপ্রথম আপনার ফোনে একটি ব্রাউজার ওপেন ( open ) করে বাংলাদেশ সরকারের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে।
- প্রথমে বাংলাদেশ সরকারের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সিস্টেমের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান। এই ওয়েবসাইটটি https://everify.bdris.gov.bd বাংলাদেশে জন্ম নিবন্ধনের যাচাই করার অফিসিয়াল প্ল্যাটফর্ম।
- ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর মেন্যু থেকে জন্ম নিবন্ধন যাচাই অথবা Verification অপশনে ক্লিক করুন।
- নির্দিষ্ট ফর্মে আপনার জন্ম নিবন্ধনের ইউনিক কোড বা ১৭-সংখ্যার নিবন্ধন নম্বরটি প্রদান করুন।
- কিছু ক্ষেত্রে, আপনাকে অতিরিক্ত তথ্য চাইতে পারে যেমন জন্ম তারিখ বা নাম,এই তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করুন।
- সব তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করার পর, যাচাই করুন বা ভেরিফাই ( Verify ) বাটনে ক্লিক করুন।
- এর পর, আপনার জন্ম নিবন্ধনের তথ্য দেখাবে। যদি কোডটি সঠিক হয় এবং নিবন্ধন বৈধ হয়, তবে আপনার নাম, জন্ম তারিখ এবং অন্যান্য তথ্য দেখাবে। যদি কোন ভুল থাকে, তাহলে একটি ত্রুটির বার্তা প্রদর্শিত হবে।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার সুবিধা সমূহ
জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার জন্য বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি না করে আপনারা সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে ঘরে বসে যে কোন ফোন ব্যবহার করে তথ্য নিতে পারে।পাশাপাশি এই তথ্য যাচাই করার জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট কোন ফি বা অর্থ প্রদান করতে হবে না। অনলাইনে এই সেবাটি পেতে আপনাকে নির্দিষ্ট কোন সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না ২৪ ঘন্টার মধ্যেই আপনি যে কোনো সময়ে আপনার জন্ম নিবন্ধন তথ্য যাচাই করে নিতে পারেন।
জন্ম নিবন্ধন যাচাইয়ের ক্ষেত্রে সাধারণ সমস্যা সমূহ
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাইয়ের ক্ষেত্রে খুব কমন কিছু সমস্যা আপনার দেখা দিতে পারে। আপনারা যারা বিভিন্ন সময়ে অনলাইননে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করে থাকেন তারা অবশ্যই অবগত থাকবেন যে., অনেক সময় সার্ভারের সমস্যার কারণে সেবা পেতে সমস্যা হয়। সে ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই একটু সময় দিতে হবে। এছাড়াও ১৭ সংখ্যার নম্বরটি প্রদানের ক্ষেত্রে নিশ্চিত ভাবে সংখ্যাটি উল্লেখ করতে হবে কেননা সংখ্যাটি ভুল হলে আপনাকে সঠিক তথ্য কিংবা কোন তথ্য পরিদর্শন করবে না।এরপরেও যদি আপনার তথ্য অনুসন্ধানে কোন সমস্যা সৃষ্টি হয় তাহলে অবশ্যই আপনার নিজস্ব ইউনিয়ন পরিষদে তথ্য সেবা কেন্দ্রে যোগাযোগ করে সমস্যা সমাধান করে নিতে পারবেন।
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে যে সকল কাগজপত্র বা ডকুমেন্টের প্রয়োজন
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধনের কপি সংগ্রহ করতে গেলে দেখা যায় যে অনেকেরই নামের মধ্যে ভুল রয়েছে কিংবা জন্ম তারিখের মধ্যে ভুল রয়েছে অথবা পিতা-মাতের নামের মধ্যে ভুল ত্রুটি রয়েছে।এসব ভুলত্রুটি সংশোধন করা আপনার জন্য অত্যন্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা জন্ম নিবন্ধন সঠিকভাবে না থাকলে বিভিন্ন কার্যক্রমে আপনাকে জটিলতার সম্মুখে হতে হবে। আমরা আমাদের প্রতিবেদনের এই অংশের জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে গেলে যে সকল কাগজপত্রের প্রয়োজন রয়েছে। সেগুলো উল্লেখ করছি-
- পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন সনদ।
- পিতা-মাতার আইডি কার্ডের ফটোকপি।
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র।
- ইউনিয়ন পরিষদ হতে নাগরিকত্বের সনদপত্র।
- বৈধ মোবাইল নম্বর। বৈধ মোবাইল নম্বর দিয়ে আপনার জন্ম নিবন্ধন ভেরিফিকেশন করা হবে।আপনার ওই ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একটি মেসেজ বা ওটিপি নাম্বার প্রদান করা হবে আপনি ওটিপি নাম্বার ইন শিওর করলে আপনার ভেরিফিকেশন কনফার্ম হয়ে যাবে।
ইউনিয়ন পরিষদে বিভিন্ন ভোগান্তির কথা আমরা বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারি। গ্রামাঞ্চলে ইউনিয়ন ভিত্তিক যে সকল ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। সেই ইউনিয়ন পরিষদ গুলোতে বিভিন্ন ভাবে জনগণদেরকে জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পাদন করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম ভাবে ভোগান্তির স্বীকার করেন। আমরা আমাদের প্রতিবেদনের মাধ্যমে এ সকল ইউনিয়ন পরিষদের জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি তদারকির জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি ।সকলেই জন্ম নিবন্ধন কাজে অংশগ্রহণ করুন। এবং জন্ম নিবন্ধন সম্পন্ন করতে সবাইকে উৎসাহিত করুন।মনে রাখবেন, জন্ম নিবন্ধন করা আপনার নৈতিক দায়িত্ব। জন্ম নিবন্ধন না থাকলে আপনি বৈধ নাগরিক হতে পারবেন না। আপনি একজন সুনাগরিক হিসেবে আপনার জন্ম নিবন্ধন অবশ্যই করতে হবে।