ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার ২০২৫

ডেঙ্গু একটি মশা বাহিত রোগ। মশার মাধ্যমে এ রোগটি একজনের থেকে আরেকজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। সারা বিশ্বে ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে শত শত মানুষ। ডেঙ্গু জ্বর একটি মারাত্মক মশাবাহিত রোগ। এটির সঠিকভাবে চিকিৎসা গ্রহণ না করলে এবং এটি সমাধানের জন্য যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ না করলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তবে বেশ কয়েক বছর ডেঙ্গু জ্বর মানুষদের মধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে এবং ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে অনেকেই অবহিত রয়েছে।
সম্মানিত পাঠক আমরা বর্তমান সময়ে এসে ডেঙ্গু জ্বরের পরিবর্তিত কিছু লক্ষণ এবং এর প্রতিকার নিয়ে আপনাদের সামনে আলোচনা করব। আশা করছি যারা এ বিষয়ে বিভিন্ন ওয়েবসাইট অনুসন্ধান করছেন আপনাদের জন্য আমাদের আজকের এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। আপনারা এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে ডেঙ্গু জ্বরের বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা লক্ষ্য করছি যে ডেঙ্গু জ্বর এর লক্ষণ পরিবর্তিত হয়েছে ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশা তার চরিত্র বদলায়েছে।
ডেঙ্গু জ্বর কী? এ জ্বর কতদিন স্থায়ী হয়?
ডেঙ্গু জ্বর বা ব্রেক বোন ফিভার একটি মশা বাহিত রোগ, যার একমাত্র বাহক এডিস মশা। এই জ্বর মানুষের শরীরের মধ্যে পাঁচ থেকে সাত দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে। জ্বরের ফলে শরীরে নানান ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়। এ বিষয়ে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বনে প্রয়োজন রয়েছে। সাধারণত আমরা সিজিওনাল জ্বর বা কোন রোগের উপসর্গ হিসেবে যে জ্বর লক্ষ্য করে থাকি তার থেকে ডেঙ্গু জ্বরের মাত্রা অনেক বেশি হয়ে থাকে। জ্বরের মাত্র জ্বরের মাত্রা ১০২ ডিগ্রি থেকে ১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত হয়ে থাকে। জ্বরের মাত্রা বেশি হওয়ার ফলে রোগীর শরীরের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। যার ফলে রোগী বিছানায় স্থায়ী হয়ে থাকতে পারে না।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণসমূহ
আমরা আমাদের প্রতিবেদনের এই অংশে ডেঙ্গুচরের পরিবর্তিত কিছু লক্ষণ নিয়ে আলোচনা করব। পাশাপাশি ডেঙ্গু জ্বরের প্রাথমিক যে লক্ষণগুলো সেগুলো সম্পর্কে এখানে আলোচনা করা হবে। ডেঙ্গু জ্বরের ফলে রক্তের প্লাটিলেট অনেক কমে যায়। তখন রোগীর মধ্যে জটিলতা আরো অনেক বেশি বাড়তে থাকে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। তদুপুরিও এর ব্যপ্তি কমানো সম্ভব হচ্ছে না।
- উচ্চমাত্রার জর: শরীরে তাপমাত্রা এই জ্বর হওয়ার ফলে ১০২ ডিগ্রি থেকে ১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত হয়। এর ফলে শরীরের ভারসাম্য ঠিক থাকে না।
- প্রচন্ড মাথা ব্যাথা: ডেঙ্গু জ্বরের ফলে মাথা ব্যথা অনুভূত হয়। বিশেষ করে চোখের পিছনে তীব্র মাথা ব্যাথা অনুভূত হয়। যার ফলে রোগী স্থির হয়ে থাকতে পারে না।
- মাংসপেশি হার ও জয়েন্টে ব্যথা: প্রচন্ড জ্বর হওয়ার ফলে শরীরের মাংসপেশিতে ব্যথা অনুভূত হয়। এ ব্যথা মনে হয় যেন হাড়ের প্রতিটি জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা অনুভব করছে।
- বমি বমি ভাব এবং ক্ষুধা মন্দা: ডেঙ্গু জ্বরের অন্যতম একটি প্রধান লক্ষণ হল রোগীর ক্ষুধা মন্দা সৃষ্টি হয় এবং বমি বমি ভাব অনুভূত হয়। দীর্ঘ সময় না খাওয়ার ফলে রোগী দুর্বল হয়ে পড়ে।
- পানি শূন্যতা: এই সময়ে পানিসূন্যতা লক্ষ্য করা যায়। কেননা অতিরিক্ত তাপমাত্রার ফলে শরীর পানি শূন্য হয়ে পড়ে এবং নিয়মিত খাওয়া দাওয়া না হওয়ার কারণে পানি ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়।
- ক্লান্তি অনুভব: এত মাত্রা জ্বর হওয়ার কারণে শরীরে ক্লান্তি অনুভূত হয়। মনে হয় যেন রোগীর শরীরে কোন শক্তি নেই।
- অস্থিরতা ভাব: ডেঙ্গু রোগের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক তাপমাত্রার কারণে স্থির হয়ে থাকতে পারেন না। ফলে রোগের মাত্রা আরো বেড়ে যায়।
- পাতলা পায়খানা: কোন কোন রোগিরর ক্ষেত্রে ডেঙ্গু জ্বরের ফলে পাতলা পায়খানা লক্ষ্য করা যায়। তবে সকল রোগীর ক্ষেত্রে পাতলা পায়খানার নাও হতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিকার
ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিকার জানা আমাদের জন্য অত্যন্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা শহরে যারা অবস্থান করছেন তাদের ডেঙ্গু জ্বরের প্রবণতা বেশি পরিমাণে লক্ষ্য করা যায়। তাই ডেঙ্গুর প্রতি আমাদের সকলের সচেতন হওয়া উচিত। গ্রাম অঞ্চলে এর প্রাদুর্ভাব অনেক বেড়েই চলেছে। ঢাকা শহরের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এডিস মশার প্রভাব বিস্তার করার সহজ হয়ে যায়। এডিস মশা দমনে সিটি কর্পোরেশন থেকে ব্যাপক পরিমাণে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়ে থাকে। সাধারণ জনগণ এ ব্যাপারে সতর্ক হলে এডিস মশার বিস্তার অনেক অংশে কমে যাবে। তাই আমাদের সকলের সচেতন হওয়া উচিত।
- প্রচুর পরিমাণ বিশ্রামে থাকা: এই সময়ে রোগীর প্রচুর পরিমাণে বিশ্রামের প্রয়োজন রয়েছে। মশারি টাঙিয়ে বিশ্রাম নিতে হবে। কোন রকম দৌড়ঝাপের মধ্যে নিজেকে জড়িয়ে রাখা যাবে না।
- তরল জাতীয় খাবার: ডেঙ্গু রোগীদের প্রচুর পরিমাণে পানি শূন্যতা লক্ষ্য করা যায়। সেক্ষেত্রে আপনাকে তরল জাতীয় খাবার যেমন ডাবের পানি ,স্যুপ জাতীয় খাবার এমনকি গ্লুকোজ জাতীয় পানি পান করতে হবে।
- প্যারাসিটামল ব্যবহার :শরীরের ব্যাথা কমানোর জন্য অনেকেই ব্যাথা নাশক ঔষধ ব্যবহার করে থাকেন সেক্ষেত্রে বলা হয়েছে যে এক্সপিরিন জাতীয় কোন ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না। সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
- শরীরের তাপমাত্রা: ডেঙ্গু জ্বরের রোগীদের শরীরে তাপমাত্রা নিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে। শরীরকে ঠান্ডা রাখতে হবে ভেজা কাপড় দিয়ে। ডেঙ্গু রোগীদের শরীর বারবার মুছে দিতে হবে। মনে রাখবেন ভেজা কাপড় বলতে একেবারে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিজা কাপড় নয়। হালকা ভেজা কাপড় দিয়ে শরীরকে বারবার মুছে দিতে হবে। যেন তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- মশারির ব্যবহার :দিনের বেলায়ও মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে। কেননা মশার কামড় থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। এডিস মশার শরীরে কামড়ালে ওই মশা যদি অন্য কাউকে কামড়ায় তাহলে তারাও ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
- পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে: ডেঙ্গু হয়েছে কিনা তার নিশ্চিত হওয়ার জন্য আপনাকে নিকটস্থ হাসপাতালে পরীক্ষা-নিক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে।
- যত্রতত্র পানি জমতে না দেওয়া: বাড়ির আঙিনায় ফুলের টবে, টায়ার, যেকোনো পাত্রে কিংবা ফেলে রাখা কোন কিছুতেই যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কেননা এই সকল স্থানে এডিস মশা জন্ম নেয়।
ডেঙ্গু রোগীদের খাবার তালিকা
আমাদের মধ্যে সব সময় বেশ কিছু কথা প্রচলন যেমন: জ্বর হলে মাছ খাওয়া যাবেনা, ডাবের পানি খাওয়া যাবে না তাতে সর্দি লাগবে জ্বর আরো বেশি হবে।এ ধরনের অবাঞ্ছিত কথাবার্তা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। মনে রাখবেন ডেঙ্গু জ্বর হলে শরীরে পানি পানি শূন্যতার লক্ষ্য করা যায় সেজন্য আপনাকে প্রচুর পরিমাণে ডাবের পানি এবং তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। পানি শূন্যতার সৃষ্টি হলে এমনিতেই দুর্বল হয়ে পড়বে। আমরা আমাদেরপ্রতিবেদনের মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগীদের একটি খাবার তালিকা উল্লেখ করছি।
- তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। যেমন: ডাব, ফলের রস।
- সবুজ শাকসবজি প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে।
- যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে আপনারা নিয়মিত খাবার গ্রহণ করবেন। শাক সবজি খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
- পেঁপে খেতে পারেন। সেটা পাকা পেতে হোক আর কাঁচা পেঁপে হোক।
- টক জাতীয় খাবার খেতে পারেন।
- যারা ভাত খেতে ভালোবাসেন তারা ভাত মাড়ি করে মাংসের ঝোল দিয়ে মেখে মেখে খাবেন। এতে করে আপনার খাদ্য-ঘাতিক পূরণ হবে।
- দুধ অথবা দুগ্ধজাত খাদ্য খাবার গ্রহণ করতে হবে। এতে প্রোটিন বেশি থাকে।
- আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বর হলে কি কি খাবার খাওয়া যাবে না?
ডেঙ্গু রোগীদের ক্ষেত্রে যে সকল খাবার গ্রহণ করার ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা নিষেধ করেছেন আমরা সেগুলো খাবারের তালিকা এখন উল্লেখ করছি।ডেঙ্গু জ্বরের জন্য গ্রহণের ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো ধরনের বাধা নিষেধ উল্লেখিত হয়নি। তবে আমরা যেগুলো খাবারের কথা এখানে উল্লেখ করছি যেগুলো বিশেষভাবে বর্জন করা উচিত। কেননা এই সময়ে শরীরে প্রচুর পরিমাণে পানি ঘাটতি থাকে যে সকল খাবার পানি ঘাটতির জন্য হজমের সমস্যা করে সে সকল খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন-
- প্রচুর পরিমাণে তৈলাক্ত খাবার।
- প্রচুর পরিমাণে মসলাযুক্ত খাবার।
- ভাজাপোড়া যুক্ত খাবার।
- অ্যালকোহল এবং কফি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
- ধূমপান করা যাবে না।
- পোলাও জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না।
- চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ করা যাবে না।