ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ২০২৫। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস কত তারিখ, কি বার?

বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর সব বড় বড় দেশ গুলোতে valentine day বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস পালিত হয়ে থাকে। এই উপলক্ষে পশ্চিমা দেশগুলোতে বিভিন্ন সাজ সজ্জা এবং বিভিন্ন কৃষ্টি কালচার এর মাধ্যমে দিনটিকে উদযাপিত করা হয়। ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে সারা পৃথিবীতে ফুলের আদান-প্রদান করা হয়। এছাড়াও বেশ হই- চই ও উন্মাদনার মধ্য দিয়ে প্রেমিক প্রেমিকারা বিভিন্ন ধরনের উপহার সামগ্রী আদান প্রদান করেন। প্রায় ১৭ শত বছর আগে পৌত্তলিক রোমকদের মাঝে প্রচলিত ছিল এই আধ্যাত্মিক ভালবাসার। এর সাথে কিছু কিছু কল্পকাহিনীও জড়িত ছিল যা পরবর্তী সময়ে রোমান খ্রিস্টানদের মাঝেও প্রচলিত হয়।
ভালোবাসার অভাবে একজন মানুষ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তার মধ্যে অত্যাচারীর ভাব সৃষ্টি হতে পারে। যার মধ্যে ভালোবাসা নাই তার কাছে কোন মানুষই নিরাপদ নয়। ভালোবাসা হীন মানুষ হিংসা- বিদ্বেষ, খুন ও ধর্ষণের মত পাপের সাথে জড়িত হতে পারে। ভালোবাসা ছাড়া পৃথিবীতে কোন কিছুই অর্জন করা সম্ভব নয়।পবিত্র কুরআনুল কারীমে উল্লেখ রয়েছে আল্লাহ তায়ালা মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন “আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য ভালোবাসা ও রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি” ( সূরা আম্বিয়া ১০৭ নাম্বার আয়াত)।সুতরাং বুঝতে পারছেন স্বয়ং মহান রাব্বুল আলামিন প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লামকে কতখানি ভালবেসে ছিল।
বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস
“ভ্যালেন্টাইন্স ডে” এর উৎপত্তি হয় খ্রিস্টীয় পূর্ব তৃতীয় শতকে রমক সম্রাট দ্বিতীয় ক্ললডিয়াসের আমলের শাসনামলে। এ সময় রোমান সম্রাট ক্ললডিয়াস একটি আইন চালু করেন যে সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে না। তিনি মনে করতেন সেনাবাহিনী সদস্যরা যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের দৃঢ়তা থেকে ব্যর্থ হতে পারে। ঠিক ওই সময় সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন এই আইনের ব্যাপারে বিরোধিতা প্রকাশ করেন। এবং তিনি গোপনে গোপনে সেনাবাহিনীর সদস্যদের বিয়ে করার কাজে সহযোগিতা করতেন। এক সময়ে তার এই সহযোগিতার বিষয়টি প্রকাশিত হয়ে যায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনকে কারাবরণ করতে হয়। কারাবন্দি থাকা অবস্থায় সেই সময়ের অনেক প্রেমিক যুগল প্রতিদিন তাকে কারাগারে দেখতে আসতো। উপহার হিসেবে ফুল নিয়ে আসতেন। ঘটনাক্রমে ওই কারাগারের কারারক্ষীর এক মেয়েও সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনকে দেখতে যেত। একসময় ভ্যালেন্টাইন কারারক্ষীর মেয়ের প্রেমে পড়ে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। ভ্যালেন্টাইনের স্ত্রীর প্রতি তার অন্তিম চিঠি ছিল- “লাভ ফ্রম ইউর ভ্যালেন্টাইন”( Love From Your valentine)। স্ত্রীর প্রতি ভ্যালেন্টাইনের ভালবাসা ও ভ্যালেন্টাইনের প্রতি দেশের যুবক যুবতীদের ভালোবাসার কথা তখনকার রোম সম্রাটের কানে পৌঁছে যায়। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে খ্রিস্টীয় ২৭০ শতকের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাকে মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত করেন। এরপর থেকে খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা পোপ ১৪ই ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ওই পাদ্রির নামে অর্থাৎভ্যালেন্টাইন এর নাম অনুসারে নামকরণ করে ভালবাসার উৎসব দিবস হিসেবে নির্ধারণ করেছিলেন।
ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস (Valentines Day)
ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস কি? সে সম্পর্কে আমাদের প্রতিবেদনের এই অংশ আলোচনা করা হবে। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস আমাদের সমাজে এখন একটি ভিন্ন আকার ধারণ করেছে। যেখানে রয়েছে যৌনতার ছড়াছড়ি। সেটা জনসম্মুখেই ক্রমাগত ঘটে চলেছে। যদিও তখনকার রোমান সম্প্রদায়ের মধ্যে এটি ছিল বিবাহিতদের অধিকার আদায়ের একটি প্রয়াস। কিন্তু কাল ক্রমে তা অবিবাহিতদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে। অবিবাহিত যুবক-যুবতীরা ভালোবাসা দিবস উদযাপনের নামে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির বেহায়াপনাকে বুকে ধারণ করেছেন। ইসলামের দৃষ্টিতে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির এই দিবস উদযাপন করার সম্পূর্ণরূপে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। বিবাহের পূর্বে কোন মুসলিম নর নারী এ ধরনের সংস্কৃতির সাথে জড়িত জড়িত হতে পারে না। ইসলামের দৃষ্টিতে শুধুমাত্র স্ত্রীকে হালাল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তবে স্ত্রীকে যৌন শান্তি দিতে গেলে তা অবশ্যই গোপনীয়ভাবে হতে হবে। কোনভাবে জনসমক্ষে আপনি আপনার স্ত্রীকে যৌনতার কাজে আকৃষ্ট করতে পারেন না। ইসলাম এ ধরনের কার্যক্রম কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন।
বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ২০২৫ সালের কত তারিখে?
প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসের ৭ তারিখ থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত সময়টাকে ভ্যালেন্টাইন সপ্তাহ হিসেবে ধরা হয়। বাংলাদেশে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ১৯৮০ সাল থেকে বিশেষভাবে পরিচিতি লাভ করে। সারা বিশ্বে বিশ্ব ভালবাসা দিবস খ্রিস্টীয় ৪৯৬ সাল থেকে শুরু হলেও বাংলাদেশ এর ব্যাপ্তি ছড়িয়ে পড়ে ১৯৮০ সালের পর থেকেই।
বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ২০২৫ সালের কি বার
ভালোবাসা দিবসে আপনার প্রিয়জনকে নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে। প্রতিটি দিন কর্মব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে আমাদের অতিবাহিত করতে হয়।পরিবারের জন্য অর্থ উপার্জন করা আপনার জীবনে যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনি ভাবে পরিবারের সাথে সময় ব্যয় করাটাও আপনার জন্য জরুরী। নিজ পরিবারকে ভালোবাসুন, প্রিয়জনকে সময় দিন তাহলে আপনার জীবন আরো মধুময় হয়ে উঠবে। ভ্যালেন্টাইনস ডে বা ভালবাসা দিবস ২০২৫ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি রোজ শুক্রবার এবং বাংলা তারিখ০১ ফাল্গুন মাস।
ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক যে কোনো ধরনের বেহায়াপনা কার্যক্রম থাকে সব সময় বঞ্চিত থাকার নির্দেশ রয়েছে। ইসলাম এগুলোকে গ্রহণ করে করে না। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে যে সকল বেহায়াপনা লক্ষ্য করা যায় এগুলোর সাথে ইসলামের কোন সম্মতি নেই। কিন্তু বাংলাদেশে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে দিন দিন যেন বেহায়াপনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের উচিত এগুলো থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়া। আমরা মুসলিম জাতি হিসেবে কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবো।ইনশাল্লাহ!