কিডনি সমস্যার লক্ষণ কি কি? কিভাবে বুঝবেন আপনার কিডনি ভালো আছে কি না?

মানবদেহের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।দেহের প্রতিটি অঙ্গই একটি আরেকটি ওতোপ্রোত ভাবে জড়িত। একটি অঙ্গের সমস্যা হলে আরেকটি অঙ্গ এমনিতেই সমস্যায় পড়ে যায়। কিডনি মানবদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এই অঙ্গের সমস্যা হলে মানুষ মৃত্যু পর্যন্ত গ্রহণ করতে পারে। তাই আমাদেরকে কিডনির বিষয়ে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। কি খেলে কিডনি ভালো থাকে সে সম্পর্কে জেনে আমাদেরকে সে সকল খাবার গ্রহণ করতে হবে এবং যেগুলো কাজ পরিচালনা করলে বা কাজ করলে শরীরের কিডনির সমস্যা হতে পারে সে সমস্ত কাজ থেকে আমাদেরকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে।
সম্মানিত পাঠক, আমাদের আলোচনার বিষয় মানব দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংঙ্গ কিডনি সম্পর্কে। আপনি অনলাইনে এসে মানবদেহের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সম্পর্কে জানতে যেহেতু আগ্রহ প্রকাশ করেছেন সেহেতু আপনি অবশ্যই একজন স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ। অথবা আপনি কিডনি সমস্যার সাথে জড়িত হয়ে পড়েছেন। আমরা আমাদের প্রতিবেদনের মাধ্যমে এই সমস্যার লক্ষণ গুলো কি কি? এই সমস্যার সমাধানের প্রতিকার কি? এবং আপনি কিভাবে বুঝতে পারবেন আপনার কিডনির সমস্যা হয়েছে কিংবা হয়নি সে সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। ধৈর্য সহকারে প্রতিবেদনটির শেষ অংশ পর্যন্ত পাঠ করুন তাতে করে আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সকল তথ্য পেয়ে যাবেন।
কিডনি কি? কিডনি কিভাবে কাজ করে?
কিডনি হচ্ছে মানব দেহের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা ছাড়া মানুষ কোনভাবেই বাঁচতে পারবে না। কিডনি মূলত রক্তকে পরিশোধিত করে থাকে। কিডনি প্রতিদিন প্রায় ১২০ থেকে ১৫০ লিটার রক্ত পরিশোধিত করে থাকে এবং দেড় থেকে দুই লিটার দূষিত বর্জ্য রক্ত শরীর থেকে বের করে দেয়। দূষিত বজ্য তরল পদার্থ গুলোকে প্রসাবের মাধ্যমে বের করে দেয়। একশত ভাগের ৯৫ শতাংশ দূষিত তরল পদার্থ প্রসাবের মাধ্যমে বের করে আনা কিডনির কাজ। বাকি পাঁচ শতাংশ বজ্য পদার্থ মানুষের শরীরের ঘামের মধ্যে দিয়ে বের হয়ে যায় এবং কিছু কিছু বর্জ্য যেগুলো মানুষের শ্বাস প্রশ্বাসের মধ্য দিয়ে বের হয়ে যায়।আমাদের শরীরের যে রক্ত রয়েছে সেগুলোকে কিডনি পাম করে নিজের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিচ্ছে, এরপর সেই রক্ত কিডনি পরিশোধিত করে আমাদের হার্টে পাঠাচ্ছে। এই প্রক্রিয়া প্রতিটি মুহূর্তেই চলমান রয়েছে। এর একটু ব্যতিক্রম হলে একজন মানুষ নির্ঘাত ভাবে মারা যেতে পারে।আমাদের শরীরকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে কিডনি পানি সংরক্ষণ করে থাকেন। আমাদের শরীরের কার্যক্রম ঠিক ভাবে পরিচালনা করার জন্য নূন্যতম দেড় থেকে দুই লিটার পানি প্রয়োজন রয়েছে। এই পরিমাণ পানি কিডনি সংরক্ষণ করে থাকে।কেননা কোন মানুষ যদি দিনে ১০ গ্লাস পানি খায়,তখন তার ঘন ঘন প্রসাব হবে। কারণ প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি কিডনি প্রসাবের মাধ্যমে বের করে। আবার যদি কোন মানুষ ২৪ ঘন্টায় অল্প সংখ্যক পানি পান করে তাহলে তার প্রসব কম হবে কারণ কিডনি তার প্রয়োজনীয় সংখ্যক পানি নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখবে।
কিডনি রোগ কি? কিভাবে বুঝবেন আপনার কিডনি ভালো আছে কিনা?
কিডনির কার্যকারিতা ব্যাহত হলে শরীরে নানান ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয় এমনকি মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। কিডনির কার্যকারিতার সমস্যা হল কিডনি রোগ ? সহজ ভাবে বলতে গেলে আমাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার করতে শরীরের যে বাধার সৃষ্টি হয় তা যদি কিডনির কারণে হয় তাহলে সেটি হল কিডনি রোগ বা কিডনির সমস্যা।বিশেষজ্ঞদের মতে কিডনি রোগ দুই ধরনের হয়ে থাকে একটি হল হঠাৎ করে কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ফলে যে রোগের সৃষ্টি হয় সেটা হল একিউট কিডনি ইনজুরি আর অন্যটি হলো দীর্ঘদিন যাবত আস্তে আস্তে কিডনির কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে গেলে যে কিডনি রোগ হয় সেটি হলো ক্রনিক কিডনি ডিজিজ। আপনি সুস্থ আছেন কিনা তা কিডনি রোগের লক্ষণ গুলো দেখলে নিশ্চিত হতে পারবেন। আপনি লক্ষণগুলো যদি আপনি অনুভব করতে না পারেন তাহলে বুঝবেন আপনার কিডনি ভালো আছে। কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত হলে ক্ষুধা মন্দা, ঘন প্রসাব সহ নানা ধরনের সৃষ্টি হয় জটিলতার সৃষ্টি হয়। এই দিকগুলো আপনাকে বিবেচনা করতে হবে।
কিডনি সমস্যার লক্ষণ কি কি?
যে কোনো রোগ একদিনই সৃষ্টি হয় না। এই রোগের সৃষ্টি ক্ষেত্রে আমরা আমাদের নিজেরই জীবনযাত্রার ভুলের কারণেই রোগের সৃষ্টি হয়। নিয়মিত খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত ঘুম, নিয়মিত চলাফেরার না করার কারণে শরীরে নানার রোগ ব্যাধীর সৃষ্টি হয়। বর্তমান যান্ত্রিক যুগে আমরা অনেক কিছুই নিয়মমাফিক করতে পারি না। এ কারণে আমাদের শরীরে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস সহ আরো বেশ কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিন যাবত ডায়াবেটিস রোগ থাকলে শরীরে নানা ধরনের রোগব্যাধির সৃষ্টি হয় তার মধ্যে কিডনির সমস্যা একটি। আমরা আমাদের প্রতিবেদনের এই অংশে কিডনী রোগের লক্ষণসমূহ উল্লেখ করছি-
- প্রসাব কম বা বেশি হতে পারে।
- প্রসাব জ্বালাপোড়া করতে পারে। এবং প্রসবের রঙের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যেতে পারে। পাশাপাশি ব্যথা অনুভব হতে পারে।
- ঘন প্রসাব হওয়া এবং প্রস্রাবের মধ্যে দুর্গন্ধ লক্ষ্য করা যাবে।
- কোমরের দুই পাশে ব্যাথা অনুভূত হবে অনুভূত হবে।
- শরীরের বিভিন্ন অংশে পানি জমতে পারে। যেমন হাত-পা এবং মুখ ফোলা ফোলা ভাব হতে পারে।
- প্রসাবের রং লালচে এবং প্রসাবের মধ্যে ফেনা ভাব দেখা যেতে পারে।
কিডনি সমস্যায় কি ধরনের খাবার গ্রহণ করা যাবে?
আপনি কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত হলে আপনার নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন খুবই গুরুত্বপূর্ণএকটি বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে দিয়ে আপনাকে বাকি সময়টুকু চলতে হবে ।প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। আমরা আপনার এই সমস্যার জন্য একটি খাবার তালিকা তৈরি করে দিচ্ছি। আপনি এটি অনুসরণ করবেন পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করবেন।স্ট্রবেরি, কফি, বাদামি চাল, লাল মরিচ বাঁধাকপি সহ শাকসবজি খেতে পারবেন। পাশাপাশি আপনি দুগ্ধ জাত খাবার খেতে পারবেন।
কিডনি সমস্যায় কি ধরনের খাবার গ্রহণ করা যাবে না?
কিডনি সমস্যা দেখা দিলে যে ধরনের খাবার থেকে আপনাকে বিরত থাকতে হবে। সেগুলো হচ্ছে- অতিরিক্ত পটাশিয়াম যুক্ত খাবার থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকতে হবে। পাশাপাশি পিউরিন যুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না, লাল রংয়ের শাকসবজি থেকে বিরত থাকতে। সুব্য জাতীয় খাবার গ্রহণ করা যাবে না। চাল কুমড়া শরীরের জন্য খুব উপকারী হলেও কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণে খাওয়ার বিধান রয়েছে। চিচিঙ্গা, জিঙ্গা এসব খাবার উপকারী হলেও কিডনি রোগীদের জন্য অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করার যাবে না। এছাড়াও আপনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ একটি খাবার লিস্ট তৈরি করবেন। যেটা আপনার জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।
আসুন নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হই। সমস্যা অনুভূত হলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে পরামর্শ নেই। রোগের বেলায় মোটে অবহেলা করা উচিত নয়। কেননা মানুষের জীবন একটাই আপনার এই একটি জীবনের জন্য আপনার পরিবার সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। আপনি কোনো কারণে সমস্যায় জড়িয়ে পড়লে আপনার পরিবার ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। কারণ আপনি একমাত্র পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। বর্তমান সময়ে আপনার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যে কোন রোগের চিকিৎসা গ্রহণ করা সম্ভব হয়েছে। মোবাইলে অনুসন্ধান করলেই আপনি যেকোনো রোগের বিষয়ে ধারণা পেয়ে যাবেন এবং সে অনুপাতে নিজেকে পরিচালিত করলে আপনার জীবনের চলার পথ অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। কিডনি সমস্যা জনিত রোগীদের প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আপনারা প্রচুর পরিমাণে পানি পান করবেন। পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে পরামর্শ নিবেন। বর্তমানে কিডনি প্রতি স্থাপনের মধ্য দিয়ে কিডনি রোগ নিরাময় করা সম্ভব। তবে এখন পর্যন্ত এটি শতভাগ কার্যকর হয় না।