গর্ভবতী মায়ের রোজা রাখার বিধান ২০২৫। মাসিকের সময় রোজা রাখার নিয়ম

সম্মানিত পাঠক, প্রত্যেক নর-নারীর উপরে রোজা ফরজ করা হয়েছে। মুসলিম ধর্ম অনুসারীদের যেমন নামাজ আদায় করা অথবা সালাত আদায় করা ফরজ তেমনি রোজা রাখাও ফরজ করা হয়েছে। ইসলামের যে মূল পাঁচটি স্তম্ভ রয়েছে অর্থাৎ যে পাঁচটি মৌলিক কাজ রয়েছে সেগুলো হল কলেমা, নামাজ, রোজা, হজ্ব ও যাকাত। বুঝতেই পারছেন ইসলামের যে পাঁচটি খুটি রয়েছে তার মধ্যে রোজা একটি। সাধারণত রোজা শব্দের অর্থ হচ্ছে পানাহার থেকে বিরত থাকা। অর্থাৎ সুবে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার থেকে নিজেকে বিরত রাখার নামই হচ্ছে রোজা।
আমরা আজকে আমাদের প্রতিবেদনে নারীদের রোজা রাখার কিছু বিধি-বিধানের বিষয়ে আলোচনা করার জন্য প্রতিবেদনটি তৈরি করেছি। মাসিক চলাকালীন সময়ে নারীদের রোজা রাখার নিয়ম এবং গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী নারীদের জন্য ইসলামের কিছু নির্দিষ্ট বিধি-বিধান রয়েছে। আমরা সেগুলো আলোচনা করব। নারীদের এই বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । সুতরাং আপনারা একটু মনোযোগ সহকারে এই প্রতিবেদনটি পাঠ করবেন।
মাসিক চলাকালীন সময়ে নারীদের রোজা রাখার নিয়ম
পিরিয়ডের সময়ে অর্থাৎ নারীদের মাসিকের সময়ে রোজা রাখা যাবে কিনা এ বিষয়ে আমাদের মুসলিম নারীদের মধ্যে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। সম্মানিত পাঠক আমরা আমাদের প্রতিদিনের এই অংশে পিরিয়ডের সময়ে রোজা রাখা যাবে কিনা রোজা রাখতে গেলে কি বিধান রয়েছে সে সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা করবো। আপনারা মনোযোগ সহকারে এই প্রতিবেদনটি পাঠ করুন এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেয়ে যাবেন।
নারীদের পিরিয়ডের অর্থাৎ ঋতুস্রাবের সময়সীমা ছয় বা সাত দিন হয়। কোন কোন সময় এর সময়সীমা আট,নয়, দশ দিন পর্যন্ত হতে পারে। এই সময়ে কোন নারী নামাজ ও রোজা আদায় করতে পারবেন না।
সূরা বাকারার ২২২ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে, পিরিয়ডের রক্ত থাকাকালীন নারী আপন অবস্থায় থাকবে, তারপর ভালো হয়ে গেলে গোসল করে নামাজ ও রোজা আদায় করতে পারবে।
রোজা পালনকারী নারীর যদি ইফতারি গ্রহণ করার কিছুক্ষণ আগেও পিরিয়ড দেখা দেয় তাহলে তার ওইদিনের রোজা বাতিল হয়ে যাবে। অর্থাৎ সহজ ভাবে বলতে গেলে রোজা পালন করা অবস্থায় যদি কোন নারীর মাসিক দেখা দেয় তাহলে সেই নারীর ওইদিনের রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। তবে পরবর্তীতে ওই রোজা এর পরিবর্তে কাজা রোজা পালন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আরো বলে রাখি রোজা রাখা অবস্থায় পিরিয়ড অথবা মাসিক হলে ওই নারী যদি গোসল করে পবিত্র হলেও তার রোজা সহীহ হবে না।
সুবহে সাদিকের পূর্বে অর্থাৎ রোজার সেহরি গ্রহণের পূর্বে যদি কোন নারীর মাসিক হয় তাহলে তাকে গোসল করে পবিত্র হয়ে সেহরি গ্রহণ করতে হবে এবং ওই দিনের রোজা তার জন্য ফরজ হবে।
গর্ভবতী মায়েদের রোজা রাখার বিধান
একটি কথা মনে রাখবেন যে, ইসলাম হচ্ছে শান্তির ধর্ম। ইসলামে এমন কোন বিষয় নেই যেটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। গর্ভবতী মা কিংবা দুদ্ধদানকারীনি মা রোজা রাখতে পারবে কিনা সে বিষয়েও ইসলাম ধর্মের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা রয়েছে। যারা অনলাইনে এসে গর্ভবতী মায়ের রোজা রাখার সম্পর্কে জানতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করছেন তাদের জন্য আমরা আজকে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছি। আশা করছি এই প্রতিবেদনটি আপনারা মনোযোগ সহকারে পাঠ করবেন এবং পূর্ণাঙ্গ তথ্য পেয়ে যাবেন।
এক নম্বর—-
যে গর্ভবতী মা রোজা রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে চাচ্ছেন তার জন্য ব্যাখ্যা হলো যে, রোজা যার তার স্বাস্থ্যের উপরে কোন ধরনের প্রভাব না করলে অর্থাৎ রোজা রাখার জন্য তার শরীরের জন্য কষ্টকর না হলে এবং তার গর্ভের সন্তানের স্বাস্থ্যের জন্য আশঙ্কা জনক না হলে এমন নারীর উপর রোজা রাখা ফরজ করা হয়েছে। অর্থাৎ সহজ ভাবে বলতে গেলে যদি কোন গর্ভধারিণী মা মনে করেন যে আমি রোজা রাখতে পারব এতে আমার শরীরের কোন ক্ষতি হবে না এবং পাশাপাশি আমার গর্ভের সন্তানের কোনরকম ক্ষতি হবে না এমন গর্ভবতী মায়ের জন্য রোজা রাখা ফরজ। এ অবস্থাতে তিনি যদি রোজা পালন না করেন তার জন্য সেটা নাজায়েজ হবে।
দুই নম্বর—-
যে সকল গর্ভবতী মা রোজা রাখলে তার নিজের স্বার্স্থের ক্ষতি হতে পারে পাশাপাশি তার গর্ভের সন্তানের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এমন সকল মায়েদের জন্য রোজা না রাখার বিধান রয়েছে। অর্থাৎ সহজ ভাবে বলতে গেলে যে সকল মায়েরা গর্ভকালীন সময়েই নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি হুমকি হতে পারে রোজা রাখলে এমন সব গর্ভবতী মায়েদের জন্য রোজা রাখা জায়েজ হবে না। গর্ভের সন্তানের যদি রোজা রাখার ফলে ক্ষতি হতে পারে এরকম আশঙ্কা রয়েছে তার জন্য রোজা না রাখাই ভালো বা উত্তম। এরকম অবস্থায় যদি কোন গর্ভবতী মা রোজা রাখে তাহলে তা মাকরুহ হবে। এ মত অবস্থায় ওই গর্ভবতী মা রোজা গুলোকে পরবর্তী সময়ে কাজা আকারে পালন করতে পারবেন।
তিন নম্বর—-
যে সকল গর্ভবতী মা রোজা পালন করতে ব্যর্থ হলেন সে সকল গর্ভবতী মা পরবর্তীতে যে কাজা রোজা পালন করবেন। তার পাশাপাশি প্রতিদিন রোজা না রাখার বদলে যে কয়দিন রোজা রাখতে পারেননি সেই কয়দিনের জন্য একজন মিসকিনকে গম, চাল, খেজুর অথবা যে যে স্থানে বসবাস করে সেই স্থানের প্রধান খাদ্য দান করতে হবে।তবে কোন কোন আলেমগন মনে করেন যে গর্ভবতী মায়েদের রোজা না রাখার ফলে শুধুমাত্র কাজা রোজা পালন করলেই হবে। কোন ধরনের কাফফারা দিতে হবে না।
আশা করছি যে উপরের আলোচনা থেকে এই বিষয়ে আপনি চূড়ান্তভাবে অবগত হয়েছেন আসুন ইসলামী বিধি-বিধান মেনে চলি। কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে নিজের জীবন গড়ি। নিজে রোজা রাখি এবং অন্যকে রোজা রাখার বিষয়ে উৎসাহিত করি। দিনের বেলা হোটেল গুলো বন্ধ রাখি। রোজার বিস্তৃতি সারা দেশের ছড়িয়ে দেই। মহান রব্বুল আলামীন সকলের রোজাগুলোকে কবুল করে নিন। আমীন।